জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় এক ছাত্রকে নির্যাতন করার ঘটনায় চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সিনিয়র ছাত্রের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক ব্যাচ জুনিয়র শিক্ষার্থী। তার নাম সাগর চন্দ্র দে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
শনিবার (১২ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্নিবীণা হলের ২০৪ নং কক্ষে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে জানান আহত সাগর চন্দ্র দে। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
এ কারণে আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন একদল শিক্ষার্থী।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দোষীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করছি। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় প্রশাসনের যে বিচার দেখলাম, তা খুবই দুঃখজনক। এ জন্য স্থায়ী বহিষ্কার করলে পরে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আর সাগর চন্দ্রের সব চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে।’
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার না করবে, আমরা এখানেই অবস্থান করব। আর কোনো রকম ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব না।’ সকাল থেকেই কলা অনুষদের সব ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় নির্যাতনের শিকার ছাত্র সাগর চন্দ্র দে’র সঙ্গে। তিনি জানান, এদিন বিকেলে ওই কক্ষে সাগরকে রোলিং চেয়ারে জোর করে বসিয়ে ঘোরাতে থাকে চারুকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহান। এসময় তাকে বারবার থামাতে বলছিলেন সাগর৷ কিন্তু তার কথায় কান না দিয়ে অনবরত চেয়ারটি জোরে ঘোরাতে থাকে। এক পর্যায়ে সেই চেয়ারটি উলটে গিয়ে পড়ে যান সাগর। এতে মাথায়, নাকে-মুখে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। এসময় দুটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় তার। কিন্তু এ অবস্থাতেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী। এমনকি ফোনও ছিনিয়ে নিয়ে আটকে রাখে সৌমিক।
সাগর বলেন, ‘ঘটনার পর আমার মোবাইলটি বারবার চাইলেও আমাকে দিতে চায়নি। তবুও অনেক চেষ্টার পর মোবাইলটি নিয়ে এক বড় ভাইকে মেসেঞ্জারে একটি ছবি পাঠাই এবং তাড়াতাড়ি আসতে বলি। তারপর ওই ভাই ৫ মিনিট পর এসে আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
খবর পেয়ে সাগরকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ওই হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা। এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মোহাম্মদ ইরফান আজিজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক তপন কুমার সরকার।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হলটির প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা বলেন, শুরুতেই আমরা রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি এবং পরে তার কাছে মূল ঘটনাটি শুনেছি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ইরফান আজিজকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অগ্নিবীণা হল প্রশাসন। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র পরামর্শক তপন কুমার সরকার বলেন, চিকিৎসক জানিয়েছেন সাগর এখন আশংকামুক্ত। ঘটনার ব্যাপারটি আমি ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করে শিগগিরই ব্যবস্থা নিবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মোহাম্মদ ইরফান আজিজ বলেন, আমরা আশা করছি তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে এবং প্রশাসন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।