1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১১:০৯ অপরাহ্ন

ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বাঁধার মুখে ভাষাসৈনিক

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

দেশে এখনো যে কজন ভাষাসৈনিক জীবিত আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকার স্যার শাহাদৎ হোসেন (৯০)। শীর্ণ শরীর নিয়ে এখনো তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না। তাই ক্ষোভ ও কষ্টে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি ফিরে যান বাড়িতে। রবিবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সামনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহাদাত হোসেন উপজেলার এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। এলাকার লোকজনের কাছে তিনি শাহাদাৎ স্যার হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় সুত্র জানায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমনের কারণে স্মৃতিবিজড়িত আঠারবাড়ি জমিদারবাড়ির ভেতরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজ। তার চত্বরেই রয়েছে এলাকার একমাত্র শহীদ মিনার। যেখানে ভাষার এই দিনটাতে শহীদদের স্মরণ করার জন্য সবাই মিলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের লোকজনও আসেন। এই কলেজ লাগোয়া এলাকায় বসবাস করেন স্বীকৃত ভাষাসৈনিক শাহাদৎ হোসেন। বর্তমানে বাড়িতে শুয়ে-বসেই সময় পার করছেন তিনি। গত বছর তাঁকে ঢাকায় নিয়ে সংবর্ধনা দেয় একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান। এবারও তাঁর দাওয়াত থাকলেও বয়সের ভারে যেতে পারেননি। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এলাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে তিনি সশরীরে শহীদ মিনারে যেতে রাজি হোন। কিন্তু ভোরে একটি হুইলচেয়ারে বসে তিনি রওনা হোন শহীদ মিনারের দিকে। এ সময় কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখে হতবাক হয়ে যান। অনেক চেষ্টা করা হয় ফটক খুলে ভেতরে যেতে। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তা খোলা হয়নি। পাওয়া যায়নি কলেজের কাউকে।

তিনি বলেন, এ কেমন ঘটনা দেখলাম নিজের চোখে। যারা বাংলা ভাষা রক্ষা করতে দিয়ে প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমি প্রতিবছর এই দিনে ভোর ৬টার দিকে শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। এবারও আমি একই সময় শহীদ মিনারে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কলেজের ফটক বন্ধ থাকায় সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যাই। যা ছিল আমার জীবনের বড় কষ্ট। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, এই বিচার আমি কার কাছে চাইব। কেউ তো আমার খবরও নিল না। তার ওপর আমি শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারলাম না। পরে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এসে তাঁকে ডেকে নেন। পরে ফটকের সামনেই কয়েকটি ইট বিছিয়ে ফুলের ডালাগুলো রেখে যান। এ সময় শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবারা চিৎকার করেও ফটক খোলাতে পারেননি। ওরা ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও এর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের ফটক খোলার দায়িত্বে ছিলেন নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম। ঘটনার সময় তিনি কলেজের ভেতরে অবস্থান করলেও শহীদ মিনারে প্রবেশ করার জন্য ফটক খোলেননি। সকাল ৯টার দিকে তাঁকে কলেজ ক্যাম্পাসে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, আমি তো বাজারে। একটা চাবি আমার কাছে। আরো দশটা চাবি তো অনেকের কাছে আছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অজয় কিশোর রায় চৌধুরী অসুস্থ থাকায় তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, জাতীয় দিবস পালনের যে কমিটি রয়েছে তার আহ্বায়ক হচ্ছেন কলেজের বাংলা বিভাগের সহীদুর রহমান স্যারের। তিনি সেই দায়িত্ব পালনের কথা। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সহীদুর রহমান বলেন, তার এক আত্মীয় মারা গেছেন। তিনি এখন হবিগঞ্জে আছেন। তা ছাড়া তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন।

আঠারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. আবুল কালাম বলেন, একজন জীবন্ত ভাষাসৈনিক ছাড়া আগতরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে না পারায় তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচার চাই।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি