1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
জামালপুরে ১৭টি হারানো মোবাইল সেট উদ্ধার করেছে পুলিশ বোরহানউদ্দিনে ওয়াশ মার্কেট সিস্টেম উন্নয়ন বিষয়ক সভা উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ৭ জানুয়ারি ভোটের সফলতা ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি ‘অনুমতি মিললে ঈদের আগেই ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি সম্ভব’ খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নতুন নির্দেশনা দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন ৩ বিচারপতি কাজের আশায় গিয়ে হলেন লাশ, ময়মনসিংহে ৬ পরিবারে শোকের মাতম পুলিশের পক্ষ থেকে বোরহানউদ্দিনে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ বোরহানউদ্দিনে স্বাভাবিক প্রসব সেবা জোরদারকরণ বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত তাপপ্রবাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না: বিদ্যুৎসচিব

নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের নায়ক রূপাই

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

পল্লী কবি জসীমউদ্দিন ১৯২৯ সালে নকশী কাঁথার মাঠ কাব্য গ্রন্থটি রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের এই কাব্যগ্রন্থ লিখতে কবি ময়মনসিংহে প্রায়ই আসা যাওয়া করতেন। সেখানেই এক সাহসী যুবক রুপা মিয়ার দেখা পান। যার অসীম সাহস আর গায়ের শক্তির কাছে অন্য কেউ ভয়ে আসতো না। এই রুপা মিয়াকে নিয়েই কবির অমর সৃষ্টি নকশী কাঁথার মাঠ।

রূপাই চরিত্রটি জসীমউদ্দীন রূপায়ন করেছিলেন বাস্তবের এই রুপা মিয়াকে দেখে , যার প্রকৃত নাম আহাম্মদ আলী ওরফে রূপা মিয়া। নিজ এলাকায় তিনি পরিচিত ছিলেন রুপা মিয়া এবং ‘রূপা গুণ্ডা’ হিসেবে। সারাদেশে তিনি নকশী কাঁথার মাঠের নায়ক রুপা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

রুপার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসী গ্রামে৷ বাস্তবের রূপাও কাব্যের রূপাইয়ের মতো বলবান বীর ছিলেন। ছিলেন সেরা লাঠিয়াল। ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের কথায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকজ সঙ্গীত সংগ্রহ করতে জসীমউদ্দীন গফরগাঁওয়ে এসেছিলেন৷ সেখানে এসেই কবি তার সাহিত্য চর্চার অন্যতম সঙ্গী খ্যাতনামা সাহিত্যিক মৌলভী শেখ আবদুল জব্বারের বনগাঁও গ্রামের বাড়িতে ওঠেন৷ এখানে অবস্থানকালে বনগাঁও গ্রামে জমির ধান কাটা নিয়ে একদিন বড় ধরণের এক দাঙ্গা (স্থানীয় ভাষায় কাইজ্জা) হয়৷

সেই দাঙ্গায় গফরগাঁওয়ের লাঠিয়াল দলের নেতৃত্ব দেন শিলাসী গ্রামের কৃষ্ণবর্ণের হালকা-পাতলা ছোটখাটো গড়নের যুবক রূপা৷ পল্লীকবি সেই দাঙ্গা দেখেন; এবং দেখেন গ্রামাঞ্চলে জমি দখলের এক নারকীয় দৃশ্য৷ লাঠিয়াল দলের নেতৃত্ব দানকারী রূপার তেজোদীপ্ত এক ভয়ঙ্কর বীরত্ব৷ ওই দাঙ্গাই কবির মনে রেখাপাত করে৷ নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে সেই দাঙ্গার ঘটনা৷ সেসময় এই রূপাকে মানুষ ‘রূপা গুণ্ডা’ বলেই জানতেন৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর একবার তিনি ইউপি ‘সদস্য’ নির্বাচিত হন৷ অবিভক্ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি সরাসরি দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েছিলেন।

গফরগাঁও বাজারের কাইয়ুম মার্কেটে একটি স্টলে আড্ডা দিতেন জসীমউদ্দীন। সেখানে বসেই রূপাই সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি৷ সেই স্টলেই কবির সঙ্গে রূপার পরিচয় হয় এবং রূপা তাঁর নিজের সম্পর্কে জানান জসীমউদ্দীনকে। যা উপজীব্য করে কবি পরে কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।

এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,
গা-খানি তার শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু।
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল।
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী,
মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।

কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দাতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি।
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।

সোনায় যে জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার’
রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধণুকের হার।
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারি পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন।
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,
কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক।
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও।

আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি।
জারীর গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
‘শাল-সুন্দী-বেত’ যেন ও, সকল কাজেই লাগে।
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন,
রূপাই যেমন বাপের বেটা, কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা নয়কো রূপাই, রূপার চেয়ে দামী,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামী।

কাব্যে, রূপাইয়ের বিপরীতে সাজু নামক যে নারী চরিত্র ছিল, তিনিও বাস্তবের এক ব্যক্তিত্ব। নাম ছিল ললীতা, রূপা ললীতাকে ভালোবাসতেন। ললীতা ছিলেন রূপার প্রতিবেশী গ্রাম মশাখালীর বাসিন্দা। ললীতা ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে মারা যান।
২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল শিলাসী গ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যান নকশী কাঁথার কালো মানিক রূপা।

নকশি কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থের নায়ক রূপাকে নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি-তে দেখানো হয় একটি প্রতিবেদন। এছাড়া মূল কাব্যগ্রন্থ নিয়ে তৈরি হয় অনন্ত হীরা পরিচালিত টেলিফিল্ম নকশী কাঁথার মাঠ। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক পরিবেশিত হয়েছে নৃত্যনাট্য। ওস্তাদ খাদেম হোসেন খান নকশী কাঁথার মাঠ নৃত্যনাট্যের সঙ্গীত পরিচালনা করে ইরান, ইরাক, এবং পাকিস্তানও সফর করেন। ২০১৩ সালে এই কাব্যগ্রন্থ অবলম্বনে নির্মিত হয় টেলিফিল্ম ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। এটি পরিচালনা করেন রাজিব হাসান ও প্রধান দু’টি চরিত্রে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী এবং ফারহানা মিলি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি