1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ন

ভারতকে বাদে বাংলাদেশ-চীনসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে আলাদা জোট করতে চায় পাকিস্তান

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার বলেছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও চীনকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ‘জোট গঠনের’ যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটিতে অন্য আরও দেশকে যুক্ত করে জোটের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। এই অঞ্চল ছাড়াও অন্য অঞ্চলের দেশকেও এতে যুক্ত করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে ইশহাক দার বলেন, “আমরা নিজেরা লাভবান হয়ে অন্যের ক্ষতি হওয়ার বিপক্ষে। আমরা সবসময় সংঘাতের বদলে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছি।”

নতুন জোট গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী মূলত সার্কের বিকল্প কোনো কিছু প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। কারণ ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার কারণে সার্ক প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে।

গত জুনে চীন-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কূটনীতিকরা একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন তারা। ওই সময় বলা হয় এই আলোচনা ‘তৃতীয় কোনো দেশকে উদ্দেশ্য’ করে নয়।

ইশহাক দার এমন সময় এ কথা বললেন যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা চলছে। যারমধ্যে ভারত-পাকিস্তানের কয়েক যুগের শত্রুতাও রয়েছে। এ দুই দেশ গত মে মাসেই চারদিনের যুদ্ধে জড়িয়েছিল।

অপরদিকে গত বছরের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। বিশেষ করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় সম্পর্ক আরও তলানিতে গেছে। গত মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাাসিনাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

পাকিস্তানের উদ্যোগ বা প্রস্তাব কাজ করবে?

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেছেন, “আমাদের নিজস্ব জাতীয় উন্নয়ন প্রয়োজনীয়তা এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকার কারও অনমনীয়তার কাছে কখনো জিম্মি হওয়া উচিত না। আপনারা জানেন আমি কাদের (ভারত) কথা বলছি।”

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংলাপ গত ১১ বছর ধরে ঝুলে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশের সম্পর্কও দোদুল্যমান।”

তিনি বলেন, পাকিস্তান এমন এক দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখে যেখানে বিভাজনের জায়গায় সম্পর্ক ও সহযোগিতা স্থলাভিষিক্ত হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে, দ্বন্দ্বগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা হবে এবং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে শান্তি বজায় থাকবে।

তবে— লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রাবেয়া আক্তার বলেছেন, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর এই আশাবাদ এ মুহূর্তে বাস্তবের চেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্খী। তবে এরমাধ্যমে পাকিস্তান ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেহেতু সার্ক এখন অকার্যকর, তাই তারা আঞ্চলিক সহযোগিতার মেকানিজমকে বহুমুখী করতে চায়।

সার্ক কি?

ঢাকায় এক সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠিত হয়। এটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হয় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। অষ্টম দেশ হিসেবে ২০০৭ সালে এ জোটে যোগ দেয় আফগানিস্তান।

সার্কের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটানো। কিন্তু গত ৪০ বছরেও সার্ক তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক।

২০১৬ সালে সার্কের ১৯তম সম্মেলন পাকিস্তানের ইসলামাবাদে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভয়াবহ এক হামলার পর ভারত সম্মেলন না যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তারা অভিযোগ করে, এ হামলায় পাকিস্তান জড়িত। এরপর থেকে সার্কের সম্মেলন আর হয়নি।

সার্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আছে ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ। দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য খুবই কম। পুরো অঞ্চলে যে পরিমাণ বাণিজ্য হয় তার মাত্র পাঁচ শতাংশ (২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছকাছি) হয় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে।

অপরদিকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১১ দেশের আসিয়ান জোটের দেশগুলো যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে তার ২৫ শতাংশই নিজেদের মধ্যে। অথচ এসব দেশে মাত্র ৭০ কোটি মানুষের বাস।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, নিজেদের মধ্যে থাকা বাধা দূর করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ৬৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করতে পারবে।

সার্কের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য সবচেয়ে কম। ২০২৪ সালে তারা মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বাণিজ্য করেছে। তবে অন্য দেশের মাধ্যমে তাদের বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

বাণিজ্য কম হওয়ার কারণ হিসেবে আঞ্চলিক সংযোগ শক্তিশালী না হওয়াকে বলা হয়।

২০১৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বড় একটি চুক্তি করতে যাচ্ছিল। এতে করে ইউরোপের মতো দক্ষিণ এশিয়ার এক দেশের গাড়ি আরেক দেশে চলতে পারত। কিন্তু পাকিস্তান এটি আটকে দেয়। এছাড়া রেল সংযোগেও বাধা দেয় তারা। এরপর থেকে করোনার সময় ছাড়া সার্ক আর বড় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ফারওয়া আমের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, যদি ভারত-পাকিস্তান সীমিত ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়তে পারত তাহলে সার্ক পুনর্জীবিত হতো। কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক অবস্থায় এটি অনেকটাই অসম্ভব।

সার্ককে পাশ কাটিয়ে নতুন জোট গড়ার চেষ্টায় অবশ্য পাকিস্তানই প্রথম নয়। সার্ক ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল মিলে বিবিআইএন নামে একটি জোট করেছিল। এছাড়া বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডকে নিয়ে বিমসটেক নামে আরেকটি জোট তৈরি করা হয়।

পাকিস্তানের প্রস্তাব কাজ করার সম্ভাবনা কতটুকু?

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের শাবাব ইনাম খান আলজাজিরাকে বলেছেন, “পাকিস্তানের এ প্রস্তাব যদিও উচ্চাকাঙ্খী, কিন্তু এটি খুবই প্রয়োজনীয়।” তিনি বলেন, “নিরাপত্তা-সর্বস্ব চিন্তাভাবনা অথবা সম্ভবত রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাবের ফাঁদে পড়ে দক্ষিণ এশিয়া বারবার বাস্তবসম্মত আঞ্চলিক সহযোগিতা, এমনকি ছোট আকারের সহযোগিতা গঠনেও সফল হতে ব্যর্থ হয়েছে।”

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি বলেছেন, “তাত্ত্বিকভাবে নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের সুযোগ রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের খারাপ সম্পর্কে কারণে সার্কের নিরব মৃত্যুর কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি জোট গঠনের স্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়া এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হওয়ার কারণে চীনের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সহযোগিতার পথ তৈরি হয়েছে।”

পাকিস্তানের এ প্রস্তাব সফল হবে কি না এ প্রশ্নে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাবিয়া আক্তার বলেছেন, “প্রথমত দেখতে হবে যখন আঞ্চলিক জোট স্থবির হয়ে আছে, তখন সম্ভাব্য রাষ্ট্রগুলি ছোট, নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক দলগুলির মধ্যে ব্যবহারিক গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছে কি না। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের উদ্যোগে অংশগ্রহণ ভারতের সাথে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা বা মূল্য সৃষ্টি করে কি না, সেটিও দেখতে হবে।”

তিনি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো পাকিস্তানের এ উদ্যোগে আগ্রহ দেখালেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সীমিত।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দোন্থি বলেছেন, পাকিস্তানের এ প্রস্তাব সফল হলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। একইসঙ্গে ভারত-চীনের প্রতিযোগিতাও বাড়বে।

সূত্র: আলজাজিরা

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি