1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ অপরাহ্ন

ত্রিশালে জব্দ সেই ট্রাককেও ফিটনেস সনদ দিল বিআরটিএ !

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২

গত সপ্তাহে ময়মনসিংহের ত্রিশালে যে ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো ট-২০-৩৫৮০) চাপায় মায়ের পেট ফেটে সড়কে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছিল, সেই ট্রাক পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায়ই না দেখেই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক ফিটনেস সনদ দেয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।

সংস্থাটির নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ তোয়াহা গত ১৮ জুলাই ট্রাকটির ফিটনেস সনদ ইস্যু করেন। এ ঘটনায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে সদর কার্যালয়ে ক্লোজ করা হয়েছে। কার নির্দেশে তিনি ঘাতক ট্রাকের ফিটনেস সনদ দিয়েছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে নারায়ণগঞ্জ সার্কেল সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালীর তদবিরে সনদ দেওয়া হয়।

গত ১৬ জুলাই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার কোর্ট ভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় ছয় বছর বয়সী সন্তান সানজিদাসহ জাহাঙ্গীর আলম ও রত্না বেগম নিহত হন। ধাক্কায় সাড়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রত্নার পেট ফেটে সড়কে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনার পর থেকেই ট্রাকটি তাঁদের হেফাজতে। চালক রাজু আহমেদ শিপনকে র‌্যাব গ্রেপ্তারের পর ওই তিনজনকে চাপা দেওয়ার মামলায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ওই মামলাতেই জব্দ করা হয় ট্রাকটি।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাকটির ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়। ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। হালনাগাদ কাগজ ছাড়াই চলছিল ট্রাকটি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পান্থপথ শাখার ঋণে ২০১৭ সালে কেনা হয় এটি। কিস্তি শোধ না হওয়ায় মালিক হিসেবে এখনও ব্যাংকের নাম রয়েছে। গাড়ির কাগজ হালনাগাদ না থাকলে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলার সুযোগ রয়েছে। এ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি। গাড়ির কাগজ ঠিক থাকলে ৩০৪(খ) ধারায় মামলা হয়। এ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর কারাদণ্ড। ফলে মামলা হালকা করতেই দুর্ঘটনার পর কাগজ হালনাগাদের চেষ্টা করা হয়।

আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক গাড়ি প্রতিবছর বিআরটিএর যে কোনো সার্কেলে নিয়ে ফিটনেস হালনাগাদ করতে হয়। গাড়ি না দেখে ফিটনেস সনদ দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিযোগ, গাড়ি না দেখেই টাকার বিনিময়ে মোটরযান পরিদর্শকরা ফিটনেস দেন। বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এর ভাগ পান।

নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক শামসুল কবির বলেন, ফিটনেস ইস্যুর দিন তিনি নরসিংদীতে ছিলেন। সেই সনদ এখনও সার্কেলেই পড়ে রয়েছে। কী কারণে, কেন, কার নির্দেশে তোয়াহা সনদ দিয়েছেন- তা জানা যায়নি। ট্রাকটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত হওয়ায় মালিক সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেননি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, এর ব্যাখ্যা নেই। তোয়াহাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২ কর্মকর্তাকে নানা অনিয়মে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর অনিয়ম বরদাশত না করার বার্তা সবাইকে দেওয়া হয়েছে। আজ সব পরিচালককে চিঠি দেওয়া হবে সার্কেলগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করতে। কোনো সার্কেলে অনিয়ম হলে সংশ্নিষ্ট পরিচালককে জবাব দিতে হবে।

গাড়ি না দেখে ফিটনেস দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, কিছু ঘটনা তো ঘটছেই। একটি গাড়ি সম্পূর্ণ যাচাই করে ফিটনেস দিতে আট মিনিট সময় লাগে। মোটরযান পরিদর্শকের সংকট রয়েছে। সে কারণে তিন-চার মিনিটের বেশি সময় পাওয়া যায় না। তবে পরিস্থিতি যা-ই থাকুক, কেউ অন্যায় করতে পারে না। গাড়ির উপস্থিতি নিশ্চিতে ফিটনেস ইস্যুর সময়ে পরিদর্শনের ছবি তুলে রেজিস্ট্রি খাতায় সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে ৩ হাজার ২০০ নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছিল বিআরটিএ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ৯৬টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছে। সারাদেশে বিআরটিএর জনবল ৯১৯ জন। মোটরযান পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শক পদ রয়েছে ৪০০। তাঁদের দিয়ে ১৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৯৮ গাড়ির ফিটনেস দিতে হয়। মোটরসাইকেল এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

বিআরটিএর সবচেয়ে বড় সার্কেল মিরপুরে ১৯ জন মোটরযান পরিদর্শক রয়েছেন। ১০ জন ফিটনেস যাচাই করেন; সাতজন সহকারী পরিদর্শক সহায়তা করেন। গড়ে প্রতিদিন হাজারখানেক গাড়ি মিরপুরে আসে ফিটনেস নিতে। ১০ জন পরিদর্শককে সাত ঘণ্টায় ১০০ গাড়ি দেখতে হয়। ফিটনেস দিতে ৬০ ধরনের কারিগরি ও যানের বাহ্যিক দিক দেখতে হয়। এর জন্য এক মিনিটেরও কম সময় পান পরিদর্শকরা। বাকি সময় যায় গাড়ির কাগজ যাচাইয়ে।

পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা বলেন, একজন মানুষের পক্ষে এক দিনে ১০০ গাড়ি যাচাই অসম্ভব। ফলে যাচাই না করেই সনদ দেওয়া হয়। তবে একাধিক বাস ও ট্রাকমালিক বলেছেন, ঘুষ না দিলে গাড়ি ঠিক থাকলেও ফিটনেস মেলে না। আর টাকা দিলে গাড়িও নিতে হয় না। বছরের পর বছর সনদ পাওয়া যায়।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, মানুষের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনবল বাড়াতে সরকারকে আবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রাইভেটকার মোটামুটি ভালোই থাকে। বাস, ট্রাকসহ বাণিজ্যিক গাড়ি ভালোভাবে খতিয়ে না দেখে ফিটনেস দেওয়া বন্ধ করতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি