1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব, ৮ দিন পর তদন্ত কমিটি!

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২

ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষিকার ব্যক্তিগত দাপ্তরিক কক্ষ থেকে গায়েব হয়ে গেছে পরীক্ষার নম্বরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি। তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে সপ্তাহ পেরোলেও এ ঘটনায় হয়নি তদন্ত কমিটি। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপোর্ট করতে গেলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন৷ এদিন রাতেই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানায় তারা।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ত্রিশাল থানায় করা এক সাধারণ ডায়েরিতে থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা জানান, বিভাগের পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শেষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২ টার দিকে কলা ভবনের নিচ তলায় অবস্থিত ব্যক্তিগত কক্ষটি তালাবদ্ধ করে বাসায় যান। পরদিন সকাল ১০ টার সময় তিনি ওই কক্ষে এসে দেখতে পান তার রুমের জানালার কাচ ভাঙ্গা, অফিসিয়াল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও গোপনীয় নথি, একাধিক শিক্ষাবর্ষের গোপনীয় নাম্বারপত্র, পরীক্ষার উত্তরপত্র, উপস্থিতি রেজিস্ট্রার খাতা, পেন ড্রাইভ নেই। তবে এ সময় সেখানে স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে ছিল থাকলেও নেই শুধু গুরুত্বপূর্ণ সেসব নথি।

এ বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল বডি সন্দেহের চোখে দেখছে জানিয়ে প্রক্টর ড. প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, বিষয়টি আমি শুনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে কল করি এবং বিল্ডিংয়ের পেছনে পাঠাই৷ আমি কক্ষে গিয়ে ম্যাডামের কাছে জানছিলাম যে কি কি ছিল সেখানে। এক পর্যায়ে ম্যাডাম বললেন যে সেই ব্যাগে থাকা অধিকাংশ জিনিসই নেই। যেখানে অনেক সেন্টেটিভ নথিপত্র ছিল।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘটনা হতে পারে। কেননা এই অফিস রুমটিকে আমরা সবাই অত্যন্ত নিরাপদ মনে করি। সেই জায়গায় তিনি যে এমন কিছু রেখেছেন এটি কেউ জানতে পারা এবং সেটি বের করে নেওয়াটা সন্দেহের অবকাশ। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমন অপরাধ সংঘটিত হলেও মামলার পরিবর্তে সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। আর সেখানে উল্লেখ করা হয়, ওই কক্ষের জানালার একটি গ্লাস পাওয়া যায় ভাঙ্গা। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে জানালাটির গ্রীল ছিল অক্ষত। অর্থাৎ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। তাহলে কিভাবে গায়েব হলো স্পর্শকাতর এসব নথি? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বর্নপ্রভার ভাষ্য, তাকে বিপদে ফেলতেই কেউ সরিয়েছে নথি।

ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা বলেন, আমি আমার চাকরি জীবনে কখনো আমার অফিস কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নথি, কাগজপত্র রাখতে সিকিউরড ফিল করিনি। সেদিন শিক্ষার্থীদের রিহার্সালের করাতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় পরদিন সকালেই অফিসে চলে আসব ভেবে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো সেখানে রেখে যাই।কিন্তু রাতের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই তা চুরি হওয়া মানে স্পষ্টই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা করেছে তারা নিশ্চয়ই অনেকদিন ধরে আমাকে অনুসরণ করেছে এবং সুযোগ পেয়ে আমাকে বিপদে ফেলতেই এ কাজ করা হয়েছে৷

গুরুত্বপূর্ণ নথি ওই কক্ষের আলমারিতে না রেখে একটি ব্যাগের ভিতরে রেখে টেবিলের পাশে ফেলে বাসায় চলে গিয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। তবে এমন কান্ডে তার দায়িত্বে অবহেলা দেখছেন না থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের প্রধান মো. আল জাবির। তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার প্রশ্নই ওঠেনা। একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত কক্ষে কোনো উপকরণ রাখলে তা সুরক্ষিত হিসেবেই রাখেন। তিনিও তাই করেছিলেন। এই ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

আল জাবির আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিরাপদ স্থান। সার্বক্ষণিক এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে কারো অফিসিয়াল কক্ষ থেকে কোনো কিছু চুরি হবে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে নিশ্চয়ই কারো ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ এটি করবেন না। নাহলে সেখানে স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিল সেগুলোও চুরি হতে পারতো, তা না নিয়ে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নথি কেন চুরি হবে।

গুরুতর এই ঘটনার সপ্তাহ পার হলেও কেন হয় নি তদন্ত কমিটি, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কথায় গরমিলে বিভ্রান্ত ছিলেন তারা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাকে জানিয়েছিল যে জিনিসগুলো মিসিং ছিল তার বেশিরভাগই তারা উদ্ধার করতে পেরেছে। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম আসলে সেগুলো পায়নি। যেহেতু দুইজনের কথার মধ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে সেজন্য আমাদের তদন্ত কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। আমরা দ্রুতই অধিকতর তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করার চেষ্টা করবো।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আহমেদুল বারীকে আহবায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের প্রধান মো. আল জাবির, প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সিকিউরিটি অফিসার রামিম আল করিম।

অন্যদিকে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, এটি চুরি নাকি অন্য কোনো ঘটনা এখানে রয়েছে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। পরে আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবো।

আট দিন পর অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও নম্বরপত্র-উত্তরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি গায়েব হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এমন কাণ্ডে রীতিমতো হতবাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি