1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

ঐতিহ্যে ঘেরা শেরপুরের ‘রং ও শীষ মহল’

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১

প্রথমাংশে জমিদারদের খাস দরবার কক্ষ ও জলসা ঘর। দ্বিতীয়াংশে জমিদারদের খাস কামরা। তৃতীয়াংশ নায়েব-ম্যানেজারের কাচারি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত সবগুলো ভবন। উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত রং মহলের তিন অংশ। রং মহলের প্রবেশ পথের দরজা দুটি। ডানদিকের দরজা বরাবর টানা লম্বা করিডোর। করিডোর ও ভিতরের অর্ধেক দেয়াল জুড়ে বিরাজ করছে রঙিন চিনাপাথরের ফ্রেসকো ও ফুল লতাপাতার আঁকা টালি বসানো।

শুধু তাই নয় পাকা বৈঠকখানা, শান বাঁধানো ঘাট, মাঠ ও মন্দির। কবির ভাষায়’ আজি হতে শতবর্ষ পরে কে মোর কবিতাখানি-র মতো শতবর্ষ পরও সেগুলোর ঔজ্জ্বল্য আজও চির যৌবন, চির উজ্জল। ঐতিহ্যের রং মহল ও শীষ মহলের মালিক ছিলেন জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী।

শেরপুরের স্থানীয় বিভিন্ন বই ও প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, জমিদার বাড়ির ঠিক দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত রং মহল। চমৎকার বাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় জমিদার কেমন সংস্কৃতি প্রিয় ছিলেন। নাচ-গানসহ অন্যান্য সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখানেই হত। রং মহলের ডানদিক ঘেঁষে শান বাঁধানো পুুকুর। জলে জলসা ঘর প্রতিবিম্বিত হয়। সেই আমলে রং মহলের দীর্ঘ করিডোর ধরে প্রতিটি কক্ষে ঢোকার দরজার পাশে ছিল পিতল ও পাথরের নানা ধরনের মূর্তি আর বিরাট আকারের ফুলদানি। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্য নির্দশন তিনআনী জমিদারদের রং মহল এটি। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পোঁনে তিনআনী জমিদার কিশোরী মোহন চেীধুরীর আমলে রং মহল, শীষ মহলসহ নানা সৌধ নির্মাণ করা হয়।

শেরপুরের জমিদারদের মধ্যে পৌনে তিন আনী জমিদার পরিবার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। ছিল তাদের জয় কিশোর লাইব্রেরি ভবন। কূল দেবতা অন্নপূর্ণা-গোপীনাথের অপরুপ সুন্দর মন্দির। যার মাঝে রয়েছে প্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও মুসলিম স্থাপত্যরীতির অপূর্ব সুসমন্বয়। লাইব্রেরিতে ছিল পাঁচ সহস্রাধিক বই। অধিকাংশই বিজ্ঞান বিষয়ক। এখন আর আগের মতো কিছুই নেই। এখন নেই বিচারালয়ের ঘন্টাধ্বণী, জলসা ঘরের গমগম লহরী, পায়েলের জমজম সুর ঝংকার, নূপুরের নিক্কন, মায়াবী অট্টহাসির ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। সন্ধ্যার ঝলমলে আলোক সজ্জায় উলুধ্বনিতে যে বাড়ী এক সময় মুখরিত হতো, সেই বাড়ীতে ভুল করেও কেউ উলুধ্বনি দেয়না। কেউ আলো জ্বালায় না। বাজেনা সন্ধ্যা পূঁজার ঘন্টাধ্বনি। নেই সাধারণ কৃষক প্রজার খবর নেবার তাড়না। ছুটে আসে না নাজির। ফরমান জারি করেন না এখন। এখন শুধু দাঁড়িয়ে আছে কিছু স্তম্ভ। তবুও নড়বড়ে।

পরের আধুনিক ইতিহাসে জমিদার বাড়িটিকে কৃষি প্রশিক্ষাণালয়ে রুপান্তরিত করা হলে লাইব্রেরি ভবনটি ভেঙে সেখানে টিনশেডের শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা হয়। রং মহলটি এক সময় কৃষি প্রশিক্ষাণালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হলেও এখন তা আর ব্যবহার হচ্ছে না। কেননা জমিদারি বিলাসিতার রং মহলের দিন ফুরিয়ে গেছে। তবে ভবনটি এতোই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, সামান্য বৃষ্টিতেই এর ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। স্থানে স্থানে সুরকির গাঁথুনি নড়বড়ে। পলেস্তা খুলে পড়ে যখন তখন। কালের বিবর্তনে জমিদারদের এসব প্রাচীন ভাস্কর্যশিল্পের অনন্য নির্দশন ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে গাইড ওয়াল করা। ভিতরে রং মহল। কিন্তু গাইড ওয়ালের পরই ময়লা আর্বজনা ও গাছের লতাপাতা দেখে মনে হবে যে এটি একটি জঙ্গল। নেই পরিস্কার করার লোক। অথচ ৬থেকে ৭বছর আগেও এই রং মহল ভবনে অধ্যক্ষ ও অন্যান্য বিভাগের অফিস কক্ষ ছিল। কিন্তু ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি পড়ায় এবং নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরী হওয়ায় ‘রং মহল ও শীষ মহল’ ভবন থেকে সকল অফিস স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে রং মহলটি গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শেরপুরের এসব ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করা আমাদের খুবই দরকার। কেননা আমাদের প্রাচীণ ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থাপনাগুলো রক্ষা না করতে পারলে অচিরেই হারিয়ে যাবে। আমি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাই।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি