1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন

নালিতাবাড়ীতে নয় বছর পর সন্তানকে ফিরে পেলেন মা–বাবা

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

২০১১ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন জব্বার আলী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের উল্লারপাড় গ্রামের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। হারিয়ে যাওয়ার পর বহুদিন সন্তানের খোঁজ করেছেন সেকান্দার আলী ও সুবুরী খাতুন দম্পতি। একপর্যায়ে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও বাড়ির পাশের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ানের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৯ বছর পর মা–বাবা ফিরে পেয়েছেন তাঁদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান জব্বার আলীকে।

এত বছর পর সন্তানকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে এলাকাবাসী সবাইকে। জব্বার এত দিন ভারতের কারাগারে বন্দী ছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি সিলেটের নয়ানিবাজার শুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরত আনা জব্বারকে তাঁর বাবা সেকান্দার আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় কলেজশিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জব্বারের বয়স এখন ৩৫ বছর। তিনি যখন নিখোঁজ হন, তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। পরিবারের ধারণা, ২০১১ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় জব্বার একা একাই বা কারও সাহায্যে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। সেখানে পুলিশ তাঁকে আটক করে সেখানকার কারাগারে পাঠায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, সেকান্দার আলী ও সুবুরী খাতুন দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে জব্বার আগে ভালো ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে হঠাৎ তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এর তিন বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি থেকে একদিন জব্বার নিখোঁজ হন। মা–বাবাসহ পরিবারের লোকজন তাঁদের সব আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর বাড়িতে খোঁজ করেন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় তিন-চার বছর খোঁজার পর মা–বাবা ছেলের আশা ছেড়ে দেন। পরে জব্বারের মা–বাবা কাজের সন্ধানে রাজধানীতে চলে যান। এখন তাঁরা রাজধানীতেই বসবাস করেন। বাবা সেকান্দার আলী ভাঙারির ব্যবসা করেন আর মা সুবুরী মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান।

গত বছরের ৭ অক্টোবর নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে ভারতের কারাগারে আটক জব্বারের ছবি, নাম, ঠিকানা দিয়ে সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট করেন। ফেসবুকে জব্বারের ছবি ও নাম ঠিকানা দেখে উল্লারপাড় গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান চিনতে পারেন। পরে সুফিয়ান ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন জানতে পারেন, জব্বার ভারতের কারাগারে রয়েছেন। সুফিয়ানকে ইউএনও মাহফুজুল মৌলভীবাজার সদরের ইউএনও শরিফুল ইসলাম সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে কথামতো জব্বারের পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ মৌলভীবাজারের সদরের ইউএনও শরিফুল ইসলামের ই–মেইলে পাঠানো হয়। পরে শরিফুল ইসলাম সুফিয়ানকে দুই মাস অপেক্ষা করতে বলেন। ইতিমধ্যে সুফিয়ান জব্বারের বাবা-মাকে তাঁদের হারানো ছেলে ভারতের কারাগারে রয়েছেন বলে মুঠোফোনে জানান।

গত ২৮ জানুয়ারি সিলেটের নয়ানিবাজার শুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে ভারতের কারাভোগ করা ১৯ জন বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করে ভারত কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৯ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা জব্বারও রয়েছেন। জব্বারের জন্য সীমান্তে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা সেকান্দার আলী ও সুফিয়ান। ছেলেকে পাওয়ার পর সেকান্দার আলী জব্বারকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো বিষয়টিতে তাঁদের সহযোগিতা করেন সেখানকার আইনজীবী অমেলেন্দু কুমার।

সেকান্দার আলী বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজের পর বহু জায়গায় খুঁজেছি। পরে ধরেই নিয়েছি জব্বার হয়তো বেঁচে নেই। ওর মা ছেলের জন্য সব সময় কান্নাকাটি করেছে। পরে সুফিয়ানের কাছে খবর পেয়ে বিশ্বাস করতে পারি নাই। এখন ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা। ইউএনও স্যার, উকিল ভাই আর সুফিয়ান না থাকলে আমি জব্বাররে ফিরে পেতাম না। আমি তাঁদের ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারমু না।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি