নিজস্ব প্রতিবেদক : ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৪০টি বসানো শেষ হলো স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে। এর মাধ্যমে পূর্ণ ছয় কিলোমিটার সেতু এখন কাঠামোর ওপরে দৃশ্যমান। আর মাত্র একটি স্প্যান বসলেই প্রমত্ত পদ্মার বুকের ওপর পূর্ণাঙ্গ অবয়ব নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যাবে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সেতুটি। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ৪০তম স্প্যানটি তোলায় হয় খুঁটিতে। পদ্মাসেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিজয় দিবসের আগেই ৪১তম, তথা শেষ স্প্যানটি বসে যাবে সেতুতে। আর এর মাধ্যমে দীর্ঘ তিন বছরের কর্মযজ্ঞের একটি বড় অংশের অবসান ঘটবে। পদ্মার বুকে পিলার স্থাপনের পর সবচেয়ে বড় কাজটিই ছিল স্প্যান বসানো, যেই স্প্যানগুলো মূলত দৃশ্যমান করে তোলে একটি সেতুকে। এই পদ্মাসেতুর একেকটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। তাকে ৪১টি স্প্যানে মোট সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ছয় কিলোমিটার ১৫০ মিটার। সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ত্রিভুজাকৃতির ১০৮ থেকে ১১৫টি স্টিলের টুকরো জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একেকটি স্প্যান। এসব টুকরো টুকরো অংশের ওজন থাকে ১৫ থেকে সবোচ্চ ৯০ টন। অর্ধ কিলোমিটার লম্বা একটি শেডের নিচে টুকরোগুলো পেছন থেকে জোড়া দিয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে। সবশেষ টুকরোটি জোড়া দেওয়া পর এটি লম্বায় ১৫০ মিটার আকার ধারণ করে। তখন ওজন দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০০ টন। বিশালাকৃতির এই স্প্যানগুলোর একেকটি বসানো হয়েছে দুইটি করে খুঁটির ওপর।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ৩৯তম স্প্যান বসানোর সাত দিনের মাথায় সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া অংশে মাঝ নদীতে ১১ ও ১২ নম্বর পিয়ারের ওপর ৪০তম স্প্যানটি বাসানো হলো। পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) ৪০তম স্প্যানটি পিলারে বসানোর জন্য মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেন তিয়াইন-ই’র মাধ্যমে নির্ধারিত পিলারের কাছে নিয়ে নোঙর করে রাখা হয়। কারিগরি অন্যান্য কাজ শেষ করে শুক্রবার সকালে ১১ ও ১২ নম্বর পিয়ারের ওপর স্প্যানটি স্থাপন করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ করবেন তারা। সেই স্প্যানটি বসে গেলেই পুরো সেতুটি একসঙ্গে দেখা যাবে। যানচলাচলের উপযোগী না হলেও পয়ে হাঁটার মতো উপযোগী হয়ে যাবে সেতুটি।
সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন জানান, সেতুর ৯০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। শেষ স্প্যানটি বসানো হলে বাকি থাকবে স্প্যানের ওপর সড়ক আর রেলপথ নির্মাণের কাজ। সেই কাজের বড় একটি অংশ এরই মধ্যে শেষ।
সেতু সচিবের তথ্য, এই সড়কপথের জন্য ২ হাজার ৯১৭টি রোড স্লাব বসানোর কথা রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ২৬৫টি বসানোর কাজ শেষ। আর স্প্যানের ভেতরে রেলপথের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্লাব বসাতে হবে। এ পর্যন্ত বসেছে ১ হাজার ৮৭০টি। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি রেলওয়ে স্লাবও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৬ ডিসেম্বরের আগেই স্প্যান বসানোর কাজ শেষ করে পদ্মাসেতুর সড়ক ও রেলপথের স্লাব বসানোর কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে সড়ক ও রেল স্লাব দুই পাড় স্পর্শ করবে। এরপর জুনের শেষ থেকে শুরু হবে সেতুর ফিনিশিং কাজ। ডিসেম্বরেই সেতু চালু করার পরিকল্পনা করেছে সরকারের সেতু বিভাগ।