1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৮ অপরাহ্ন

গৌরীপুরে ত্রিফসলী জমির মাটি গিলে খাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তিন ফসলী জমিতে গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। এসব ইটভাটাগুলো গিলে খাচ্ছে, ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল)। বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ছে ফসলের মাঠ, বনজ-ফলদ বাগান। প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। প্রতিবছর কমছে ফসলি জমি, খাদ্য উৎপাদনে বাড়ছে অশনিসংকেত কৃষি বিভাগের।

প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বনভূমি, অভয়ারণ্য, জনবসতিপূর্ণ ও আবাসিক এলাকা এবং বছরে একের অধিক উৎপাদিত ফসলি কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা নিষেধ রয়েছে। কিন্তু সে আইন লঙ্ঘন করে উপজেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গড়ে তুলছেন ইটভাটা।

ইটভাটা তৈরি করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই’র সনদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসক প্রদত্ত লাইসেন্স, কৃষি অধিদপ্তরের প্রত্যয়নপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করতে হয়। কিন্তু উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটারই কাগজপত্র নেই। যার ফলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটাগুলো থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার অচিন্তপুর, বোকাইনগর, ডৌহাখলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটার ইট প্রস্ততের জন্য এসব এলাকার ত্রিফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব ফসলি জমিতে করা হচ্ছে পুকুর। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহার করে ভারি যানবাহন দিয়ে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তা। ইটভাটার মাটি পরিবহণের সময় মাটি পড়ে পুরো রাস্তা বিপদজ্জনক করে তুলছে। প্রচণ্ড কুয়াশায় পাকা সড়কে মাটি পিচ্ছিল হওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় গাছপালায় মড়ক দেখা দিচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। ভাটার ধোঁয়ায় সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নানা রকম রোগব্যাধির সৃষ্টি হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করার বিধান রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, আবাসিক ও জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না এবং সরকারি বনাঞ্চল থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা কেউ মানছে না।

কৃষি বিভাগের সাবেক উপসহকারী এক কৃষি অফিসার জানান, রামগোপালপুর ইউনিয়নের ইটভাটাগুলো দ্বিফসলি জমিতে স্থাপিত। বোকাইনগরের একটি ইটভাটা দ্বিফসলি জমিতে আর অচিন্তপুর ও বোকাইনগরের অপর ইটভাটাগুলো ত্রিফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতিবছর শত শত হেক্টর জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে ফসলের ও প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে মাটি কাটা হলে একসময় খাদ্য উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হবে।

অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গৌরীপুরের কোনো ইটভাটার বৈধ লাইসেন্স নেই। সবকটি ইটভাটাই অবৈধ।

জানা গেছে, উপজেলার মামদীপুরে ইকো ব্রিকস, বলুহায় এসএস ব্রিকস, শাফায়েত ব্রিকস, এনজিএম ব্রিকস, বেরাটিতে শামছু ব্রিকস, পুম্বাইলে মাইসা ব্রিকস, রসুলপুরে আয়েশা ব্রিকস, দারিয়াপুরে এসএইচবি ব্রিকস, মদিনা ব্রিকস, অচিন্তপুরে জননী ব্রিকস, বোকাইনগর ডালিয়াবিলে খান ব্রিকস, কুটুরগাঁও চরপাড়ায় বিআরবি (মেসার্স ঢাকা ব্রিকস), গুজিখাঁয় একতা ব্রিকস, চাচা-ভাতিজা ব্রিকস, অচিন্তপুরের সিংরাউন্দে মেসার্স তাজ ব্রিকস, বিসমিল্লাহ ব্রিকস, তানিয়া ব্রিকস ও শাপলা ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, ফসলি জমির প্রাণ হচ্ছে টপ সয়েল। জমির প্রথম ৮ থেকে ১০ ইঞ্চিকে মাটি, এখানে থাকে মাটির জৈব পদার্থ। টপ সয়েল ধ্বংস করা হলে জমি উর্বরতা শক্তি হারায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আমীন পাপ্পা জানান, জমির টপসয়েল মাটি কেটে নেয়ার ২টি অভিযোগ পাওয়ার পর এসিল্যান্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্য কোথাও অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রসিকিউশনের নির্দেশনা আসলে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রশাসন ম্যানেজ করে অবৈধ ইটভাট চলছে এই অভিযোগ সত্য নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি