সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা, ভবনে তালা ঝোলানো এবং শাটডাউন কর্মসূচির নেপথ্যে গুরুতর অনিয়ম ও পরিকল্পিত ইন্ধনের প্রমাণ পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদন ও গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, টানা ছয় দিন দাবি-দাওয়ার আড়ালে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে ‘কার্যত’ ব্যাহত করার মতো ষড়যন্ত্রমূলক সুসংগঠিত কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার দিকে এগোলেও একই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানো এবং পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টির মতো ঘটনাকে মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক ইন্ধন ও বাইরের প্রভাবের ফল হিসেবে দেখছে। তদন্ত শেষে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবি নিয়ে সরকারের অবস্থান ইতিবাচক এবং এই দাবি বাস্তবায়নের কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে মাঠপর্যায়ে যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে, তা স্বতঃস্ফূর্ত নয়। প্রাথমিক তদন্তে এর পেছনে একটি শক্তিশালী মহলের সমন্বিত ইন্ধন ও প্রভাবের ইঙ্গিত মিলছে। সহকর্মীদের ওপর হামলা, পরীক্ষা ব্যাহত করা বা স্কুলে তালা ঝোলানোর মতো কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বৈধ আচরণ হতে পারে না।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কিছু শিক্ষকের অতিউৎসাহী সিদ্ধান্তের ফলেই বার্ষিক পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক প্রশাসনিক তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সাথে এর বাইরেও যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নষ্ট করেছেন, তারাও শাস্তির মুখোমুখি হবেন।
অস্থিতিশীলতার নেপথ্যে ‘শক্তিশালী মহল’
সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নতুন করে বিশ্লেষণ শুরু করেছে। তাদের দাবি, আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর অপচেষ্টা হয়েছে এবং এর সঙ্গে বাইরের কিছু প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে— বেশ কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে বাইরে থেকে আসা নির্দেশ, রাজনৈতিক প্রভাব ও সংগঠিত সমন্বয়ের মিল পাওয়া যাচ্ছে। উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মাঠপর্যায়ে অচলাবস্থা তৈরি করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিভাগের এক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনের ঘোষণার আগেই তাদের কয়েকটি বিদ্যালয়ে তালা ঝোলানোর নির্দেশ এসেছিল। মাঠের শিক্ষকরাও অনেকেই আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, বিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের সাথে অনেকেই একমত ছিলেন না। তাছাড়া, যেকোনো যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হলে তা প্রচলিত আইনেও গুরুতর অপরাধ।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মন্ত্রণালয় বলছে, এই আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করে অন্তত তিন ধরনের গুরুতর অপরাধ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা, অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন পরীক্ষা ব্যাহত বা বাতিল করতে বাধ্য করা এবং সহকর্মী বা শিক্ষাপ্রশাসন কর্মকর্তাদের ওপর হামলা বা হুমকি দেওয়া। সরকারি চাকরি আইনের আওতায় এসব কর্মকাণ্ড শাস্তিযোগ্য। তদন্তে প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, সাময়িক বরখাস্তসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
তবে প্রশাসনের আরেকটি অংশ বলছে, মাঠপর্যায়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ভূমিকা রেখেছেন। যদিও কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও চিহ্নিত করা হয়নি, তবে আন্দোলনের সময় নির্বাচন, বিস্তার ও লক্ষ্যবস্তুর ধরন বিশ্লেষণ করে ‘সুশৃঙ্খল সমন্বয়ের ছাপ’ পাওয়া গেছে।
আশ্বাসেও থামেনি আন্দোলন, ‘বদলি ঝড়ে’র পর কর্মসূচি প্রত্যাহার
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের এবারের আন্দোলন শুরু হয় ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ডাকে। পূর্ব ঘোষিত তিন দফা দাবি আদায়ে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরও সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগ করে গত ২৪ নভেম্বর রাতে ২৫-২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ দিনের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে ওই দিন (২৪ নভেম্বর) সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেরা বেগম বলেন, সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেড প্রদান, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন—এই তিন দফা দাবির বিষয়ে আমরা বহুদিন ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আশ্বাসের বাইরে কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।
এরপর ২৭ নভেম্বর থেকে একই দাবিতে (তিন দফা) প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করে। এর মধ্যেই শিক্ষকরা ১ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
পরিস্থিতি জটিল হলে ৩০ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে পরীক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
সেদিন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন দফা দাবিতে শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতি ‘সরকারি চাকরি আইন’ এবং ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা’র পরিপন্থি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। তাই শিক্ষার্থীর কল্যাণ বিবেচনায় শিক্ষকরা এ ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন দফা দাবিতে ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া লাগাতার কর্মবিরতির বিষয়ে তারা অবগত। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডের আলোকে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি ‘যৌক্তিক’ বলেই মনে করে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গত ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষক নেতাদের নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন দফা দাবি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষকদের দাবির প্রতি মন্ত্রণালয় ‘সহানুভূতিশীল’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তবে কোনোভাবেই যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে শিক্ষক সমাজকে সচেতন থাকতে হবে।
একই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও বার্ষিক পরীক্ষা নিতে শিক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষকরা সরকারের সব আহ্বানই প্রত্যাখ্যান করে সর্বাত্মক কর্মবিরতি, শাটডাউন ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
এ অবস্থায় সরকার হার্ডলাইনে যায় এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকদের বদলি শুরু করে। গত ৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া পাঁচজনসহ মোট ৪২ সহকারী শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাধারণত বদলি হলেও শিক্ষকরা নিজ জেলায় পদায়ন পান। কিন্তু এবার ‘প্রশাসনিক কারণ’ দেখিয়ে সবাইকে পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি করা হয়।
বদলির শিকার আন্দোলনের পাঁচ শীর্ষ নেতা হলেন— প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নোয়াখালী সদরের কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবুল কাশেম, প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক ও জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবার রহমান এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান।
বেছে বেছে বদলির এমন সিদ্ধান্তে ওইদিন (৪ ডিসেম্বর) রাতেই আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। একই সাথে ৭ ডিসেম্বর (রোববার) থেকে যথারীতি বার্ষিক পরীক্ষাও নেওয়া শুরু করেন শিক্ষকরা।
যা বলছেন শিক্ষক নেতারা
সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শোনার আগেই কল কেটে দেন।
অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দীন মাসুদকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক মো. মাহবুবুর রহমান সাম্প্রতিক শিক্ষক আন্দোলন ‘পরিকল্পিত’ও ‘রাজনৈতিক ইন্ধননির্ভর’ এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষক, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মাহবুব বলেন, ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছি। সরকার যা মনে করছে, তা সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি। শিক্ষকরা পেশাজীবী মানুষ। সরকারি কর্মচারীদের কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। আমাদের কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা আছে। আলোচনা চলছে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় শিক্ষকদের বদলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। এর বাইরে আঞ্চলিকভাবে বড় কোনো তালিকা বা গণবদলি করা হয়নি। এসব শুধুই গুজব।
১১তম গ্রেড পাচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দাবি ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, দীর্ঘ আলোচনার পর সরকারের সর্বশেষ অবস্থান ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা হবে সহকারী শিক্ষকদের চাকরি।
তারা বলছেন, এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নীতিগত সমন্বয় ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যয়ভার বিশ্লেষণ, সংশোধিত পদকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনুমোদনের মতো কারিগরি ধাপগুলোও বেশ এগিয়েছে। এসব ধাপ সম্পন্ন হলেই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ১১তম গ্রেড ঘোষণা করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সহকারী শিক্ষকদের দায়িত্ব ও অবদান বিবেচনায় এমনিতেই উন্নত গ্রেড দেওয়া প্রয়োজন ছিল। নতুন কারিকুলাম কার্যকর, লাইফ-স্কিলভিত্তিক শিক্ষাদান, মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন, ডিজিটাল টুল ব্যবহারসহ বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়নে সহকারী শিক্ষকরা যে ভূমিকা রাখছেন, সেটি আগের পদমর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাই তাদের গ্রেড সমন্বয় করা জরুরি ছিল।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালে এবং অচলাবস্থার সময়ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া এগিয়ে গেছে। নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা ইতোমধ্যে পরিষ্কার। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতেও সরকারের সম্পূর্ণ সদিচ্ছা রয়েছে। আন্দোলনের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেও গ্রেড–সংক্রান্ত ফাইল অগ্রসর হওয়া সরকারের আন্তরিক অবস্থানের প্রমাণ।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের আরেকটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে বেতন কমিশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানাতে পারে। কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ১১তম গ্রেড কার্যকর হতে পারে নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে। এতে দেশের প্রায় চার লাখ সহকারী শিক্ষকের বেতন কাঠামোয় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে।
দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা দুঃখজনক : মহাপরিচালক
দাবি আদায়ের নামে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেছেন, শিক্ষক আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি বলেন, ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে কাজ এগিয়ে নিয়েছে। তবু পরীক্ষার সময় আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ানো জনমতের বিরুদ্ধে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তর কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।
মহাপরিচালক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডসহ গ্রেড উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আমি মনে করি, শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক এবং তাদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নথি পাঠিয়েছে।
তিনি জানান, ১১তম গ্রেড নিশ্চিতকরণ ছাড়াও শিক্ষকরা ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন। এ তিনটি দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে অধিদপ্তর মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মতামত পাঠিয়েছে। অর্থ সচিব ব্যক্তিগতভাবে এসব দাবিকে সমর্থনযোগ্য বলে মত দিয়েছেন। তবে বাস্তবায়নের জন্য নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রয়োজন। চলতি মাসেই পে-কমিশনের সুপারিশ পাওয়া গেলে বিষয়টির আরও অগ্রগতি হবে।
তিনি বলেন, পরীক্ষার সময় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অভিভাবকদের হতাশা ও ক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
মহাপরিচালক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তর ‘হার্ডলাইনে’ যেতে বাধ্য হয় এবং কিছু শিক্ষককে বদলি করে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।