ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গণধর্ষণে বাধা দেওয়ায় মর্জিনা বেগম (৪৫) নামে এক নারী খুনের শিকার হন। লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার ওই তিনজনের মধ্যে শহিদুল ইসলাম নামে একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
শহিদুল সড়ক বাজারের পাহারাদার। গ্রেপ্তার হওয়া হোসেন ও রুমান নামে বাকি দুজনের জবানবন্দি নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ওই তিনজন মিলেই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে একাধিক সূত্র জানায়।
পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মোবাইল ফোনের কল লিস্ট, সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে এই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়।
আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রাম নয়াবাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকা মর্জিনা বেগমের লাশ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। মর্জিনার গলা ও পায়ে কাপড় পেঁচানো ছিল। লাশের পাশেই পুরুষের জুতা পড়ে ছিল।
এ ঘটনায় মর্জিনার মেয়ে রহিমা বেগম আখাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে মর্জিনার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
পিবিআই জানায়, পণ্য নামানোর কথা বলে মঙ্গলবার রাতে মর্জিনাকে ডেকে আনেন বাজারের পাহারাদার শহিদুল। তাকে পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে শহিদুল ধর্ষণ করে। পরে হবিগঞ্জের গয়েরপুর গ্রামের মো. রুমান মিয়া ও রানীগঞ্জের হোসেন ওরফে শফিক ধর্ষণের চেষ্টা করে।
এসময় মর্জিনা বাধা দেন। এ অবস্থায় তিনজন মিলে তাকে হত্যা করে লাশ রেখে পালিয়ে যায়। রুমান ও হোসেনকে মূলত শহিদুলই ডেকে আনে।
পুলিশের সূত্রটি আরো জানায়, খবর পেয়ে পিবিআই তদন্ত শুরু করে। পুলিশ সুপার শচীন চাকমাসহ একটি দল আখাউড়ায় যান। তারা বিভিন্নভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। আটক পাহারাদার শহিদুলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে আরো দুজনকে আটক করা হলে রহস্য উন্মোচন হয়।
ঘাতকদের বর্ণনা দিয়ে পিবিআই সূত্র জানায়, শহিদুলের পর হোসেন ও রুমান ওই নারীকে জোরপূর্বক হাত পা বেঁধে ধর্ষণ করার চেষ্টা করতে থাকে। ভিকটিমের প্রতিরোধের মুখে আসামিরা তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হত্যাকাণ্ডের সময় আসামি হোসেন গলা চেপে ধরে, শহিদুল দুই হাত চেপে ধরে ও রুমান মিয়া ভিকটিমের দুই পা এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। সম্মিলিতভাবে আসামিরা মর্জিনা বেগমের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পিবিআই জানায়, প্রযুক্তিগত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, শহিদুল ইসলাম মোবাইল সেট হারানোর মিথ্যা দাবি করলেও, ঘটনার পর তিনি একই হ্যান্ডসেটে সিম কার্ড পরিবর্তন করে অন্য মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করছিলেন। তবে নানা বিষয়ে সন্দেহ হলে সড়ক বাজার থেকেই তাকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুজনকে মসজিদপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।