1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ
স্ট্রোকের চিকিৎসায় আশার আলো

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের পথে জমাট বাঁধা রক্তই অনেক সময় প্রাণঘাতী স্ট্রোকের কারণ হয়। আগে খুব কম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে না গেলে স্ট্রোকের চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত। এখন আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ‘মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি’ আশার আলো দেখাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী হাসপাতালে গেলে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কের নালির ভেতরে জমাট রক্ত অপসারণ করে প্রবাহ স্বাভাবিক করা যায়। এতে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকি কমে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে (নিনস) শুরু হয়েছে এই সর্বাধুনিক সেবা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এই টিমের প্রধান নিনসের স্ট্রোক ও ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু। তিনি এই চিকিৎসায় তুরস্ক থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। এই চিকিৎসার জন্য ক্যাথল্যাব প্রস্তুতে নতুন করে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

দৈনিক গড়ে এই হাসপাতালে স্ট্রোকের ৪০০ রোগী আসেন। দুই থেকে তিনজনকে এই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। দেশে প্রতি হাজার জনে গড়ে ১৩ দশমিক ছয়জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ২৩ শতাংশ রোগীর বয়স ৫০ বছরের নিচে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার ২৮ শতাংশ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ’।

ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মিনিটই মূল্যবান। যত দ্রুত বন্ধ রক্তনালি খুলে দেওয়া যায়, তত বেশি কোষ বাঁচানো সম্ভব। মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি মস্তিষ্কের বড় অংশকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ এখনও জানে না যে স্ট্রোকের চিকিৎসা সম্ভব। আমাদের দেশে অনেকে মনে করেন, স্ট্রোক মানেই পঙ্গুত্ব। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ দ্রুত হাসপাতালে আসে।

কীভাবে হয় এই চিকিৎসা

স্ট্রোক দুভাবে হতে পারে। মস্তিস্কে রক্তনালি বন্ধ হয়ে এবং ফেটে গিয়ে। ৮০ শতাংশ স্ট্রোকই রক্তনালি বন্ধ হয়ে হয়। প্রথমে সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করে রক্তনালি বন্ধের কারণে, না ফেটে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হয়েছে তা নিশ্চিত হতে হয়। শুধু রক্তনালি বন্ধ হয়ে যার স্ট্রোক হয়, তাকেই মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমির চিকিৎসা দেওয়া হয়। মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি ছোট ধরনের অস্ত্রোপচার, যা করা হয় ক্যাথল্যাবে। হার্ট অ্যাটাকে রক্তনালিতে যেমন স্টেন্ট বসানো হয়, তেমনি এ চিকিৎসায় মস্তিষ্কের বন্ধ রক্তনালি খুলে দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সফলভাবে এই চিকিৎসা করা রোগীদের ৫০ শতাংশ পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান, মৃত্যুহার কমে ৯০ শতাংশে।

স্ট্রোক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আফজাল মমিন বলেন, সরকারি ভর্তুকি, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক তৈরি ও বিভাগীয় পর্যায়ে ক্যাথল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি সেবা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। স্ট্রোক বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। সময়মতো আধুনিক চিকিৎসা পেলে স্ট্রোক থেকে মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব রোধ করা যায়। তবে এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই।

দেশের বাস্তবতা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের তথ্য বলছে, দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। ২০২২ সালের এক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, প্রতি হাজার জনে ১১ দশমিক ৩৯ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ময়মনসিংহ বিভাগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি, রাজশাহীতে সবচেয়ে কম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, মানসিক চাপ, ফাস্টফুড গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোক বাড়াচ্ছে। তরুণদের মধ্যে রাত জাগা ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্ট্রোকের প্রথম চার ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে বেশির ভাগ রোগী পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তবে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্ট্রোকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে এলে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ঢাকা ও এর বাইরে স্ট্রোকের চিকিৎসায় ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য আমরা সারাদেশে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে। স্ট্রোক চিকিৎসাকেও আমরা এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি