1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন নয়, ঐক্যবদ্ধ জাতি চায় জামায়াতে ইসলামী

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে ৯০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ মুসলমান। বাকিরা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের। কিন্তু আমরা এখানে ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করার পক্ষে নই। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি দেখতে চাই।

শনিবার ( ৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় উলামা কমিটির উদ্যোগে দেশের বিশিষ্ট দাঈ ও ওয়ায়েজ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশ জাতি হিসেবে এখানে আমরা হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান দশকের পর দশক বসবাস করে আসছি। পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে কয়টি দেশ আছে উল্লেখ করার মতো, সেখানে বাংলাদেশ বিশেষ স্থানে।

তিনি বলেন, আমরা যেমন আল্লাহ তায়ালার দরবারে দরখাস্ত করে পয়দা হওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ নিইনি, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ঠিক তাই। সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় এখানে জন্ম নিয়েছেন। মানুষের সামনে বিভিন্ন ধর্মমত আছে। আল্লাহ মানুষকে বিচার বিবেচনা ও বিবেক দান করেছেন। মানুষ বিচার-বিবেচনা ও বিবেকের জায়গা থেকে সে ধর্মকে গ্রহণ করবে।

দাঈদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে দিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার দেওয়া শ্বাশত বিধান, খাতেমুন নাবিয়্যিনের মাধ্যমে যে আলোকিত বিধান আল কুরআন বা সংবিধান পাওয়া গেছে, তা বাস্তবায়নে মুহাম্মদ (সা.) এর তার ফিকির, দাওয়া ও কর্মকে অনুসরণ নিজেরা করা ও অন্য মানুষকে আহ্বান জানানো। কারণ মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। এটাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমাদের কারো নেই।

তিনি বলেন, এখানে যারা আছেন, তারা মানুষকে সত্য সুন্দর একটি সমাজ গঠনে জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। মানুষকে কল্যাণকামী হতে তারা উপদেশ দেন, তারা রাসূলে কারীম (সা.) মানবজাতির প্রতি যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন, দ্বীনের আহ্বানকারী, দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে।

নাগরিক সেবা সম্পর্কে জামায়াত আমির বলেন, যিনি নাগরিক সেবা দেবেন তাদের ধর্ম, বর্ণ, ভিন্ন গোত্রের পরিচয় থাকতে পারে, কিন্তু নাগরিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সেবক। আর গ্রহীতার জায়গায় আমি গ্রহীতা। আমরা বাজারে গিয়ে সওদা করতে গিয়ে কারো নাম ধর্ম পরিচয় জানতে চাই না, দেখি দাম গ্রহণযোগ্য কিনা, পণ্য মানসম্পন্ন কিনা। বিশেষ করে আমরা যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ পর্যন্ত সহপাঠীরা আমরা তো একই শিক্ষকের শিক্ষায় শিক্ষা গ্রহণ করেছি, একই বেঞ্চে বসেছি। কে মাইনরিটি, কে ভিন্ন ধর্মের। সেটা বিবেচনা করিনি। কাউকে কেউ তাড়িয়ে দিইনি। কারো পরিচয় জেনে খারাপ আচরণ করা তো হীনম্মন্যতার পরিচয়।

তিনি বলেন, এমন একটা দরদি সমাজ রাসূল (সা.) এর নেতৃত্বে মদিনায় কায়েম হয়েছিল। মদিনায় ইহুদিদের জন্য কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সেটা ইসলাম গ্রহণ করেনি কারণে নয়, বরঞ্চ ভিন্ন কারণে। এটা যেখানেই ঘটেছে ঘটবে সে কোনো ধর্মের সেটা বিবেচ্য না, শাস্তি পাবে। সমাজকে সঠিক জায়গায় রাখার জন্য। সেটাই মদিনায় হয়েছে। সেই নববী সমাজ থেকে সবাই ইনসাফ পেয়েছে, অধিকার পেয়েছে, কাজের সুযোগ পেয়েছে। সব কিছু পেয়েছে।

তিনি বলেন, ইসলামের এই অনিবার্যতা ও প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি, কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না। যেহেতু এটা আল্লাহর সর্বশেষ বিধান। কারণ তিনি স্রষ্টা আর আমরা মানুষসহ সবাই মাখলুক। তার সৃষ্টিকে তার চেয়ে আর সে ভালোবাসতে পারে। আর কুরআনে বলে দেওয়া হয়েছে, কোন সৃষ্টির জন্য কী আচরণ করতে হবে।

কুরআনে দুটি হকের কথা বলা হয়েছে, হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ঈবাদ। সৃষ্টির উপরে স্রষ্টার কী অধিকার, আর সৃষ্টির উপরে সৃষ্টির কী অধিকার। এখানে হাক্কুল ইনসান বলা হয়নি। সমস্ত সৃষ্টি ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আল্লাহ ইবাদত করতে হবে। তার সেট করা নিয়মে।

জামায়াত আমির বলেন, যারা আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ গোলামি আনুগত্য স্বীকার করে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আমান বা নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তারা কখনো অন্য কোথাও মাথা নত করে না। তাদের সম্মান মাথা নত হয়, শুধু আল্লাহর কাছে। আল্লাহ বিনয়কে খুব পছন্দ করেন। সেটা শুধু তার ক্ষেত্রে না, সব সৃষ্টির ক্ষেত্রেই। যে মানুষ বিনয়ী হতে পারে না, তাকে মানুষ সম্মান করে না।

তিনি বলেন, চলার পথে চ্যালেঞ্জ আসবে, সরল সত্য পথে চলার ক্ষেত্রে মিথ্যা অপবাদ আসবে, প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে। বিনয়ের সঙ্গে তা মোকাবিলা করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া সময় নষ্ট না করে সালাম বা শান্তির পথ বেছে নেবে।

হেদায়েত দেওয়ার মালিক আল্লাহ। সেখানে আমাদের অসহিষ্ণু হওয়ার সুযোগ নাই। যখন কোনো জাতি বিপদে পড়ে তখন সেই জাতির আলেম বা শিক্ষিত মানুষদের পথ দেখানো। তারা হবেন রাহবার। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর পার করছে। প্রথম স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালে। ৮৪ বছর অতিক্রম করার পরও আমরা মানবিক, দায়িত্বশীল সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। এই সংকট উত্তরণে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যদি আলেমরা পথ দেখান তাহলে জাতি পথ পাবে, উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, উলামায়ে কেরামের মধ্যে জাতি ঐক্যের ব্যাপারে ইস্পাত কঠিন ঐক্য দেখতে চায়। ইসলামের মৌলিক বিষয়ে উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, জাতীয় জীবনে প্রয়োজনীয় বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, এটাই জাতির প্রত্যাশা। হ্যাঁ, ব্যতিক্রম হতে পারে, কিন্তু ব্যতিক্রমকে মেনে নিয়ে সহনশীল হতে হবে, পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আত্মঘাতী ঝগড়ায় বাহাসে লিপ্ত হওয়া যাবে না, পরস্পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে মন খুলে কথা বলবো, কথা শুনবো, পরস্পর বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, এটাই আমরা আশা করি।

একজন শিক্ষিত মানুষ জাতির যে ক্ষতি করতে পারে, তা হাজার মানুষ মিলেও করতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই, যিনি নামাজের ইমাম তিনিই হবেন সমাজের ইমাম। তিনি যেমন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, মসজিদের ভেতরে নামাজ কায়েমের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ঠিক মুত্তাকী মানুষগুলো যদি সমাজের নেতৃত্ব দেন তাহলে সমাজেও শান্তি কায়েম হবে। যারা শুধু আল্লাহকে ভয় করে চলবে। জীবনের প্রত্যেকটি ব্যাপারে তারা অধীনস্ত ও সহকর্মীদের ব্যাপারে ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে। কারণ আল্লাহ দায়িত্ব পালনে হুঁশিয়ার করেছেন। কেয়ামতের দিনে দায়িত্ব সম্পর্কেই জবাবদিহি করতে হবে। ওয়ার্ড মেম্বার থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত এই চরিত্রের মানুষ যদি দেশের দায়িত্বে আসেন তাহলে আমরা যে মানবিক সমাজ আশা করি, সেই সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি