ওয়াকিটকিতে দেওয়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের বার্তা ফাঁস নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ কনস্টেবল অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে অমি দাশের বিষয়ে জানা গেছে, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন আহমদ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ছবি রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশে ২০১৩ সালে পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন অমি। তিনি পুলিশের টেলিকম ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি প্রেষণে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানায় অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রামকৃষ্ণ মিশন রোডের সুর্য মহাজন বাড়ি এলাকায়। অমির বাবা রাজীব দাশ পটিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওই পুলিশ কনস্টেবলের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে অমির বিষয়ে পটিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান বলেন, ছাত্রজীবনে অমি দাশ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।
গত সোমবার (১১ আগস্ট) মধ্যরাতে বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিং ইশান মিস্ত্রি হাট সংলগ্ন সড়কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ ওরফে রানা। পরদিন (মঙ্গলবার) সিএমপির ফোর্সদের অস্ত্রধারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন কমিশনার হাসিব আজিজ। এই বার্তা ওয়াকিটকিসহ ভিডিও করেন খুলশী থানার অপারেটর অমি দাশ। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেন।
ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একাধিক টিম মাঠে নেমে সংবেদনশীল এই বার্তা ফাঁসকারীকে খুঁজে বের করে। রোববার (১৭ আগস্ট) অভিযুক্ত অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আজ (সোমবার) আদালতে সোপর্দ করে খুলশী থানা পুলিশ। একইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অমি দাশকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এ দিন তার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, অমি দাশকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দিবাগত রাতে ওয়াকিটকিতে সিএমপির সদস্যদের উদ্দেশে মৌখিক নির্দেশনায় কমিশনার বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যে অস্ত্রের প্রাধিকার ছিল, ওই প্রাধিকার অনুযায়ী থানার মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবির টিমগুলো ও সকল ফোর্স অস্ত্র ক্যারি করবে। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া এবং লাইভ অ্যামুনিশন ছাড়া কোনো পেট্রোল পার্টি, মোবাইল পার্টি, ডিবির পার্টি, চেকপোস্ট পার্টি বের হবে না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের প্রাধিকার অনুযায়ী লাইভ অ্যামুনিশন ছাড়া কেউ বের হবে না। প্রাধিকার অনুযায়ী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও স্যুট পরে তারপর ডিউটিতে যাবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু রাবার বুলেট দিয়ে কাজ হচ্ছে না। বন্দরে (বন্দর থানা) একজন এসআই গুরুতর আহত হয়েছেন। আরেকদিন আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। বন্দর থানার অফিসার যে অবস্থায় পড়েছেন, ওই পরিস্থিতিতে পড়লে যেন লাশ ছাড়া মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি ফেরত না আসে। পুলিশের কোনো টহল পার্টির সামনে অস্ত্র বের করলে, আই রিপিট, সেটা ধারালো অস্ত্র হতে পারে কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র হতে পারে– অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে, এতে কোনো সন্দেহ নাই, সবাইকে বলছি। আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার, দণ্ডবিধি ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত, আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সব পুলিশ অফিসারের আছে। অস্ত্র কিংবা কোপ দেওয়ার আগে অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।