ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি জমি বুঝিয়ে দিয়ে ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধি পেলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। শনিবার (১৪ জুন) সকালে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ হলরুমে ভূমিহীন পরিবারের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তাকে সংবর্ধনা দিয়ে ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে হাতিয়ার ভূমিহীনরা তাদের জায়গা বুঝে না পেয়ে হতাশ ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের লাঠি হিসেবে ভূমিহীনদের ব্যবহার করতো। জুলাই বিপ্লবের পর আব্দুল হান্নান মাসউদের সহযোগিতায় ভূমিহীনরা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পায়। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তারা আব্দুল হান্নান মাসউদকে ‘ভূমিহীনদের বন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে।
এ সময় আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এখানকার মানুষ এখনো অবহেলিত। গত ১৭ বছরে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন চোখে পড়েনি। আমি চাই, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই দ্বীপের উন্নয়নে কাজ করতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি হাতিয়ায় ফেরি সার্ভিস চালু করতে চাই, তাহলে স্পিডবোট ও ট্রলার মালিকদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়— কারণ এতে তাদের ব্যবসা হুমকিতে পড়ে। যদি ভূমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দিতে চাই, গরিব-অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চাই, তবে ভূমিদস্যুদের গা জ্বলতে থাকে। আর আমরা যদি হাতিয়ার সড়ক-অবকাঠামো উন্নয়ন করতে যাই, তাহলে যারা অপরাজনীতি করে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি মনে করি, উন্নয়নের জন্য আমাদের একটি সম্মিলিত সংগ্রাম প্রয়োজন। যেন এই দ্বীপে আর একটি ভূমিহীন পরিবারও না থাকে।
আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ভূমিহীনদের যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক নেতারা লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। এই মানুষগুলোর কথা সংবাদ মাধ্যমে আসে না, সুশীল সমাজের চোখে পড়ে না, সাংবাদিকদের দৃষ্টিতেও আসে না। তাদের দুঃখ-কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই।
নদী ভাঙন প্রসঙ্গে হান্নান মাসউদ বলেন, হাতিয়ায় নদী ভাঙন রোধে গত ৫০ বছরে কেউ একটি জিও ব্যাগও ফেলতে পারেনি। অথচ আমি গত ১০ মাসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছি। আপনারা যদি আমার পাশে থাকেন, তাহলে স্থায়ী ব্লক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এমনকি ৫ আগস্টের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি হাতিয়ার নদী ভাঙনের কথা তাকে জানিয়েছি।
হাতিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ভূমিহীন পরিবারের সদস্য শরিফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হাতিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ফিরোজ উদ্দিন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক মো. ইউসুফ রেজা, হাতিয়া নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদেরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।