1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির নিজস্ব ইচ্ছা: প্রেস সচিব নোয়াখালীতে এক হাজারের বেশি শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ চিড়িয়াখানায় খাঁচার বাইরে সিংহ, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কর্তৃপক্ষের আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল জোবাইদা রহমানকে নিতে বিমানবন্দরে পৌঁছেছে গাড়িবহর গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কে’র দায়িত্ব পেলেন শহীদ গণহারে বদলি আদেশের পর শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত স্কুলের তালা ভেঙে প্রাথমিকের পরীক্ষা নিলেন ইউএনও ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা : জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সপ্তাহে তিনদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চলবে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট

যারা সংস্কারের তালিম দিচ্ছে, ১৭ বছর তাদের রাস্তায় দেখা যায়নি: আমীর খসরু

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন যারা সংস্কারের তালিম দিচ্ছে, গত ১৭ বছর তাদের কাউকে রাস্তায় দেখা যায়নি। শেখ হাসিনা পালানোর পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে, সেই সংস্কারের কথা মাথায় রেখেই বিএনপি ৩১ দফা দাবি দিয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এ কথাগুলো বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে গেলে যে কাজগুলো শুরু হওয়া প্রয়োজন, সেগুলোর কিছুই হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, ভিন্নরূপে নানা ভঙ্গিতে পুরোনো কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মানুষের কাছে এর আগে কেউ যায়নি। বিএনপি সেটা করছে। কারণ, যেকোনো সংস্কারের জন্য মানুষের সমর্থন দরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভব নয়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক কাজগুলো করে গেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিনি কোনো প্রচার–প্রচারণায় ছিলেন না। প্রচারণা থাকলে তিনি বিশ্বব্যাপী একজন ভালো মানুষ হতে পারতেন।

শেখ হাসিনার পতনের পেছনে অনেকে কৃতিত্ব নিচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পেছনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ৪২ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এটাই হাসিনার পতনের মূল কারণ ছিল। অথচ তাঁকে কেউ স্মরণ করছে না।

শেখ হাসিনা মানুষের মাঝে কিছু স্বৈরাচারী মনোভাব রেখে গেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, সরকার সেটা জানাচ্ছে না। তারা কেন জানাচ্ছে না? কেউ যদি মনে করে হাসিনার মালিকানা অন্য কারও হাতে গেছে, দেশে কী হবে, সেটার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে—এই দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র মালিক দেশের জনগণ।

দেশকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার মানবিক করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের মতামত নেই, মানুষের মতামত নেই। এর পেছনে কারা জড়িত, সেটা তাঁরা জানতে চান।

স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয় উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, যত দিন নির্বাচিত সরকার না আসবে তত দিনে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের শেষ প্রশ্ন ছিল, দেশের নির্বাচন কবে হবে? কারও চেহারা দেখে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী দেশে বিনিয়োগ করবেন না।

বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে আমীর খসরু আরও বলেন, একটি ছোট গোষ্ঠী তাদের স্বার্থে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে, এটাই শেষ কথা।

এখন পর্যন্ত কী সংস্কার হয়েছে প্রশ্ন তুলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পুলিশ এখনো আগের মতো ধান্দাবাজ রয়ে গেছে। সিভিল সার্ভিস এবং পুলিশে আগের লোক রয়ে গেছে। কাউকে বদলানো যায়নি। তিনি বলেন, সরকারের অবস্থা হলো, তাদের চাপ দিলেই দাবি মেনে নেয়। জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমেছে; কিন্তু এখন আবার সেটা বাড়ছে।

সরকারপ্রধানকে সবাই ভালো মানুষ বলছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রশ্ন হলো, সরকার কি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে? দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বেড়েছে। নতুন একটি দল হয়েছে এনসিপি, তারাও অন্যদের সমালোচনায় মুখর। তারা কি সরকারি নাকি আধা সরকারি নাকি অন্য কিছু, সেটা বোঝা যায় না।

পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এগুলো ঠিক হলেই প্রকৃত সংস্কার অর্জিত হবে। দক্ষ প্রশাসক হলে তিন মাসের মধ্যেই এই সংস্কার সম্ভব।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের কথা এই সরকার জানত না, এটা বিশ্বাস করা যায় না। জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের শরিকেরা এখন প্রায় বিভক্ত। এখন সবাইকে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংগ্রাম করে গেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে দেখা গেছে, অনেকের মাঝে প্রতীকী জাফরুল্লাহ চৌধুরী লুক্কায়িত ছিলেন। তাঁদের সবার আকাঙ্ক্ষা ছিল, বাংলাদেশের প্রকৃত মালিকানা তার সাধারণ নাগরিকদের হবে। হাসিনারা প্রতিষ্ঠা পায় দেশের কাঠামো এবং দুর্বল ভিত্তির কারণে। সেই কাঠামো মেরামতকে সংস্কার বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, যারা নির্বাচন চায়, তারা সংস্কার চায় না। আবার যারা সংস্কার চায়, অন্যরা মনে করে, তারা সম্ভবত নির্বাচন চায় না। এই মুহূর্তে একক কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি সব সমস্যার সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন।

দেশপ্রেমের পরীক্ষায় শতভাগ নম্বর পেতে হয় উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই শতভাগ নম্বর প্রাপ্ত নায়ক। প্রতিটি জনপদে যাঁদের জন্ম বিরল। দেশের শিক্ষা কারিকুলামে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনী সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সাইফুল হক আরও বলেন, সরকার গঠনের নয় মাস পরও তারা কোন পথে হাঁটছে, সেটা কেউ বলতে পারছে না। পুরোনো ফ্যাসিবাদী পথে কেউ হাঁটতে চায় না। সবাই পরিবর্তন চেয়েছে। তিনি মনে করেন, সরকার দ্রুত সময়ে সবার সম্মতিক্রমে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে পারে। যেটা দেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

সরকার প্রতিদিন নতুন নতুন প্রসঙ্গ উত্থাপন করছে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, এখনো কেন নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে মানুষের মনে সংশয় কাজ করছে? এর কারণ, সরকারের নীতিনির্ধারণী স্তরের ব্যক্তিদের অতিকথন। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁরা এখন বিরোধী শিবিরে পরিণত করেছে।

যাঁরা জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে চান তাঁদের হুঁশিয়ার করে ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশকে নিয়ে যাঁরা ছিনিমিনি খেলতে চান, তাঁদের সাবধান হতে হবে। জামায়াতে ইসলামী চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের অংশ ছিল, তাই তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু একাত্তরের ইস্যুতে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তাঁরা নতুন বন্দোবস্ত ও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিভাজনের রাজনীতি দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনের একটি নিবিড় পথনকশা খুঁজে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, আজকের বাংলাদেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। তাঁকে কোথাও পরিচিত করাতে হতো না। তিনি সবার বন্ধু ছিলেন। তবে কেউ কেউ তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অনেক নির্যাতন ও কষ্ট দিয়েছিলেন। অথচ তাঁর পরিবারের সঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি এই দেশের ‘চে গুয়েভারা’ ছিলেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী ও নারী নেত্রী শিরীন হক। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের নাগালে ওষুধ পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যিনি চিকিৎসাকে জনস্বাস্থ্য বলে পরিচয় করিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতেই তাঁর সারা জীবনের কর্মতৎপরতা ছিল। সরকারিভাবে যে স্বাস্থ্যবিমা এখনো সৃষ্টি হয়নি, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই কাঠামো তৈরির চেষ্টা করে গেছেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। স্মরণসভার সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি