1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন, উচ্ছ্বসিত চার লাখ বাসিন্দা

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম। সেই সন্দ্বীপ থেকে এবার বাস ছুটবে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে। ফেরিতে চেপে সাগর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের। আজ সোমবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাট নৌপথে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো ফেরি চলাচল। ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে সন্দ্বীপে যাত্রীবাহী ও মালামালবাহী যানবাহন চলাচলও শুরু হয়েছে। ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনে সাতজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন।

চারপাশে জলরাশিঘেরা সন্দ্বীপ মাত্র ৭৫০ বর্গকিলোমিটারের একটুকরা ভূখণ্ড। এ অঞ্চলের প্রায় চার লাখ বাসিন্দার যাতায়াতব্যবস্থার জন্য রয়েছে কুমিরা-গুপ্তছড়াসহ ছয়টি নৌপথ। একটিমাত্র যাত্রীবাহী জাহাজে মানুষ যাতায়াত করতেন এত দিন। পাশাপাশি স্পিডবোট, কাঠের ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার হতো। ঘটত অনেক দুর্ঘটনা। ছিল কাদা মাড়িয়ে হাঁটার দুর্ভোগ। ফেরি চালু হওয়ায় এসব দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেল সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।

যেভাবে উদ্বোধন হলো
আজ সকাল সোয়া আটটার পর সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পৌঁছায় উপদেষ্টাদের গাড়িবহর। শুরুতেই জেটি ঘাট-১–এ বিআরটিসি বাসের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এরপর বাসে উঠে ঘুরে দেখেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর ফেরিঘাট উদ্বোধন করেন তিনি। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। সকাল ৯টায় উপদেষ্টাদের নিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে ফেরি ছাড়ে। সকাল ১০টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ফেরি পৌঁছানোর পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের স্বাগত জানান। ফেরি থেকে নেমে গুপ্তছড়া ঘাটের নামফলক উন্মোচন করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক-ই-আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধন রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা অংশে ৭০০ মিটারের একটি জেটি নির্মাণ করে বিআইডব্লিউটিএ। এরপরের বছর ২০১৪ সালে তাঁদের সঙ্গে ঘাট পরিচালনাকারী সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের একটি চুক্তি হয়। চুক্তিতে তিন বছরের জন্য প্রতিবছর ৪০ লাখ টাকা টোল নির্ধারণ হয় বিআইডব্লিউটিএর। তিন বছর পর টোল বাড়িয়ে বার্ষিক ৫৫ লাখ টাকা টোলে আবারও দুই বছরের চুক্তি হয় দুই সংস্থার। এরপর আর চুক্তিতে না গিয়ে দুই সংস্থা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ঘাটের মালিকানা নিয়ে উভয় সংস্থার দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঘাটের দুর্ভোগ কমাতে আন্দোলন শুরু করে সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। ২০২০ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাক্কলন নির্ধারণ করতে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে বর্তমান পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি সম্ভাব্য তিনটি নৌপথ পরিদর্শন করে ফেরি চলাচলের জন্য গাছুয়া আমির মোহাম্মদঘাট (সন্দ্বীপ)-বাঁকখালী (সীতাকুণ্ড) রুট চূড়ান্ত করে। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৩ সালের মার্চে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের দিকে ২ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করে। নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কটির সাগরের দিকের অংশ প্রবল জোয়ের ঢেউয়ে ধসে গেলে সেখানে ঘাট নির্মাণে সংশয় তৈরি হয়। এরপর আরও একাধিকবার কমিটির সদস্যরা উপযুক্ত নৌপথ নির্ধারণে পরিদর্শন করেন। গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সন্দ্বীপের বাসিন্দা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আবারও উদ্যোগী হয়ে ফেরিঘাট নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেন। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় পুনরায় সে বছরের ২৯ আগস্ট একাধিক ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে বিআইডব্লিউটিএর গঠিত কমিটি। পরে কমিটি বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়।

সামনে যে চ্যালেঞ্জ
দেশে প্রথমবারের মতো উপকূলীয় নদীবন্দর এলাকায় ফেরি সার্ভিস শুরু করেছে সরকার। পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকায় বেশ কিছু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। ইতিমধ্যে সমস্যায় পড়ে উদ্বোধন ৫ মার্চের পরিবর্তে পিছিয়ে তা ২৪ মার্চে নির্ধারণ করতে হয়েছে।

ফেরি সার্ভিসের স্থায়িত্ব টিকিয়ে রাখতে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মার্চ মাসের পর থেকেই ধীরে ধীরে সন্দ্বীপ চ্যানেল অশান্ত হয়ে ওঠে। এখানে জোয়ার-ভাটায় পানির স্তরের হ্রাস-বৃদ্ধির পার্থক্যও অত্যধিক। বর্তমানে ভরা কটাল ও মরা কটালে পানিস্তরের হ্রাস–বৃদ্ধি প্রায় ২১ ফুট পর্যন্ত হয়, যা দেশের অন্য কোথাও হয় না। জোয়ার-ভাটায় এ রকম বিশাল তারতম্যের কারণে এ চ্যানেলে ফেরি চালানো অনেক কঠিন হবে। এ পথ আমাদের দেশে উপকূলীয় চ্যানেলে প্রথম। ফলে কিছু সমস্যার মুখোমুখি তো হতে হবে। যেহেতু বর্তমান ফেরি এ অঞ্চলে চলাচলের উপযোগী নয়, তাই এপ্রিল মাস থেকে ফেরি চলাচল হয়তো বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় এলাকায় চলাচল উপযোগী ফেরি নির্মাণ করছে। আগামী বছর থেকে এই সমস্যা আর থাকবে না বলে আশা করা যায়। কিন্তু এ চ্যানেলে পলি জমার হার অনেক বেশি। ফলে বারবার ড্রেজিং করা লাগতে পারে।

ফেরি কপোতাক্ষের মাস্টার মো. শামসুল আলম বলেন, ফেরিতে মসৃণভাবে গাড়ি ওঠাতে হলে পন্টুন এক জায়গায় স্থির থাকতে হবে। জোয়ার-ভাটায় শুধু ওঠানামা করবে। কিন্তু এখানে ভৌগোলিক বা অন্য কোনো কারণে পন্টুন পাশাপাশি সরে যায়। এটা এক সমস্যা। এ ছাড়া এ নৌপথে জেলেদের অনেক জাল রয়েছে। এ জাল রাখা যাবে না।

ফেরিতে যানবাহনের ভাড়া
ফেরিতে ধরনভেদে যানবাহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে বিআইডব্লিউটিসি। এ–সংক্রান্ত একটি ভাড়ার তালিকাও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রকাশিত ভাড়ার তালিকায় দেখা যায়, এক টন পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া ১ হাজার ৩০০ টাকা। তিন টন পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহন (ছোট ট্রাক,লরি ও কাভার্ড ভ্যান) ১ হাজার ৫০০ টাকা; তিন থেকে পাঁচ টন পণ্যবাহী ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ থেকে আট টন পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ির ভাড়া দুই হাজার, আট থেকে ১১টনের পণ্যবাহী গাড়ির ভাড়া ২ হাজার ৭০০ টাকা, ১০ চাকাবিশিষ্ট সাধারণ পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে (গ্যাস, বিস্ফোরক দ্রব্য বাহিত ও নন–স্ট্যান্ডার্ড যানবাহন ছাড়া) ৩০ টন পর্যন্ত ওজনের গাড়ির ভাড়া ৫ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া তিন থেকে আট টন পণ্যবাহী কিন্তু আকারে বড় বাস কিংবা কোচের সমান হলে ভাড়া ২ হাজার ৭০০ টাকা, মিনিবাসের ভাড়া ১ হাজার ৭৫০ টাকা, মাঝারি আকারের বাস ২ হাজার ৪৫০ টাকা, বড় বাস ২ হাজার ৬৫০ টাকা, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, বড় টেম্পু ও হিউম্যান হলার–জাতীয় যানবাহনের ভাড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা, স্টেশন ওয়াগন, ল্যান্ডক্রুজার, স্কাউট–জাতীয় গাড়ি, বড় জিপ, প্রাডো, নিশান, পাজেরো ও পেট্রলচালিত লাক্সারি জিপ–জাতীয় যানবাহন ১ হাজার ৩০০ টাকা, ব্যক্তিগত কার ও টেম্পুর ভাড়া ৭৫০ টাকা, মোটরসাইকেল ১৫০ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও রিকশার ভাড়া ৪০০ টাকা, বাইসাইকেল ৭৫ টাকা, ডিলাক্স শ্রেণির যাত্রী জনপ্রতি ১০০ টাকা ও সুলভ শ্রেণির যাত্রী জনপ্রতি ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফেরির সময়সূচি
উদ্বোধনের দিন থেকে পরবর্তী আট দিনের একটি সময়সূচি প্রকাশ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আপাতত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ফেরির সময়সূচি দেওয়া হয়েছে। এরপর আবহাওয়া ভালো থাকা সাপেক্ষে ফেরি চালানো কিংবা বর্ষাকালীন সময় পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে। সময়সূচি অনুযায়ী, উদ্বোধনের প্রথম তিন দিন উভয় দিকে দুবার করে ফেরি চলাচল করবে। এর পর থেকে দিনে একবার করে ফেরি চলাচল করবে। জোয়ার–ভাটার সময় অনুযায়ী ফেরি ছাড়ার সময়ও পরিবর্তিত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি