1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

কাজের আশায় গিয়ে হলেন লাশ, ময়মনসিংহে ৬ পরিবারে শোকের মাতম

উবায়দুল হক, ময়মনসিংহ
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজকছড়া-উদয়পুর সড়কের সাজেকে শ্রমিক বহনকরা ড্রামট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে নিহত ৯ জনের মধ্যে ছয়জনের বাড়িই ময়মনসিংহে। তাদের পাঁচজন ঈশ্বরগঞ্জ ও একজন গৌরীপুর উপজেলার বলে স্বজনদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিহতদের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতারা হলেন- ঈশ্বরগঞ্জের উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুরজিথর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে তোফাজ্জল হোসেন বাবলু (২১), হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. নয়ন মিয়া (২২), নজরুল ইসলামের ছেলে মো. মোহন মিয়া (১৬), গিরিধরপুর গ্রামের শহিদুল্লাহর ছেলে আবু সাঈদ ওরফে শাহ্ আলম (২৮), বড়হিত ইউনিয়নের মধ্যপালা গ্রামের মৃত রিয়াসত আলীর ছেলে এরশাদুল ইসলাম আশাদ (৩৫) ও গৌরীপুরের মইলাকান্দা গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে তপু হাসান (১৫)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহতদের প্রত্যেকেই ছিলেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তারাই ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হঠাৎ করে পরিবারের কান্ডারিকে হারিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

ঈশ্বরগঞ্জের তারুন্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুরজিথর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে মোবারক হোসেন শ্রমিকদেরকে নিয়ে সাজেক যাচ্ছিলেন। গ্রামে কয়েকদিন ধরে সবাইকে গিয়ে গত মঙ্গলবার রওনা হন বাড়ি থেকে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দূর্ঘটনায় মোবারকের অবস্থাও গুরুতর। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়।

ঈশ্বরগঞ্জের তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গিরিধরপুর গ্রামের শহিদুল্লার ছেলে আবু সাঈদ শাহ আলম (২৮)। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। আট বছর বয়সী মেয়ে শাহনাজ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পাঁচ মাস বয়সী একমাত্র ছেলে ইয়াছিন। ছেলে-মেয়েকে আদর করতে করতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান শাহ্ আলম। যাওয়ার সময় স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারকে বলে গিয়েছিলেন দুইমাস পর কাজ থেকে ফিরে আসলে একমাত্র ছেলে ইয়াছিনের মুখ থেকে তখন বাবা ডাক শুনতে পাবেন। কিন্তু তা আর হলো না! স্বামীর শেষ বেলার কথা বলে আহাজারি করছিলেন তিনি। ফেরদৌসী আহাজারি করে বলেন, ইয়াছিনের মুখ থাইক্যা বাবা ডাক শুনবো গো। ও আল্লাহ গো আমার ছেলে ইয়াছিন এহন কারে বাবা ডাকবো গো। আমার সংসার কেলা চালাইবো গো।

তারুন্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুরজিথর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোহন মিয়া (১৬)। অসুস্থ বাবার সংসারের খরচের জোগান দিতে গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে সাজেকে যান তিনি। ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা নজরুল ইসলাম। আহাজরি করে তিনি বলেন, ‘আমি আর কিছু চাইনা গো, তোমরা আমার ছেলেরে আইন্যা দাও গো। সন্তানেরের লাশ কীভাবে আমি কাঁধে লইবাম গো।’

শ্রীপুরজিথর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে তোফাজ্জল হোসেন বাবলু (২০)। এক বছর বয়সী কন্যা তোফা আক্তার ছিল বাবলুর নয়নের মনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবলু কাজের আশায় সাজেক গিয়েছিল। মা রুমেলা খাতুন আহাজরি করে বলেন, আমার বুকের মানিকরে ওরা কামে নিয়া গেল, কিন্তু আমার সব শেষ কইর‌্যা দিল। আমারে অহন মায়া কইয়্যা ডাকবো কেডা।

একই গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. নয়ন মিয়া (২২)। তার ১৬ মাস বয়সী তাওহীদ নামে একটি সন্তান রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী তানজিলা আক্তার। তিনি বলেন, ভালো টাকা কামাই করতে সাজেক যাইতাছিল আমার জামাই। কিন্তু আমার সব শেষ অইয়া গেল। আমার পোলাডার কী অইবো।

একই এলাকার চারজনের পাশাপাশি উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের মধ্যপালা গ্রামের মৃত রিয়াসত আলীর ছেলে এরশাদুল ইসলাম আশাদ (৩৫)। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের বড়হিত ইউনিয়নের যুগ্ম আহয়ক ছিলেন তিনি। আশাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসাদুজ্জামান বলেন, ভাগ্নে মোবারক কাজ পায় সাজেকে। সেখানে লোক নিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে যাচ্ছিল আশাদ। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।

তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রানা বলেন, সাজেকের দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে ৫ জনের বাড়িই ঈশ্বরগঞ্জে। তার মধ্যে ৪ জনের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। এ ঘটনায় আমি নিজেও খুবই মর্মাহত।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৫ জন ঈশ্বরগঞ্জের বলে পরিবার সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি