1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

আজ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৬১তম বর্ষে পদার্পণ করছে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১
ছবি : সাদিক হোসেন

১৮ আগস্ট ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’। কৃষি প্রধান এই দেশে সনাতন কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নে তথা বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়নে ও কৃষি-বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ষাটের দশকে গড়ে ওঠা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশের প্রথম উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৬১তম বর্ষে পদার্পণ করছে।

করোনা প্রাদুভাবের কারণে এবার সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সকাল ১০টায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও গাছের চারা বিতরণের মাধ্যমে দিবসটির উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন।

বিশ্বমানের গুণগত কৃষি শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ৬০ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রথিতযশা শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ নিরলসভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে চলেছেন। গত ৬০ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদদের অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হয়েছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ লাভ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনির্মাণ ও বিকাশ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বদানকারী প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ওসমান গণি আর একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বর্তমানে উপচাযের্র দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।

ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে দু’টি অনুষদ নিয়ে ১৯৬১ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু। এরপরে ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৪৫টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সিমেস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। ৪৩টি শিক্ষা বিভাগে তিন সেমিস্টার মেয়াদে এমএস ডিগ্রি কার্যক্রম চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক), অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও অনুষদসমূহ তাদের শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মকাণ্ডের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ, পোস্ট গ্রাজুয়েটে ডিপ্লোমা-ইন-ইনফরমেশন কম্যুনিকেশন টেকনোলজি (পিজিডি-আইসিটি), এগ্রিকালচার এমবিএ, কোর্স চালু রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বের অনান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে ৫ম স্থান ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। কৃষি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান এ সাফল্যগুলোর কৃতিত্ব এ দেশের কৃষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের, এটি আজ সর্বজন স্বীকৃত। গত ৬০ বছরে নানা সফলতা পেয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা। স্বল্প সেচে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধানের প্রযুক্তি উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, নতুন উন্নত মানের অধিক মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাত উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন পশু প্রজনন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম। দ্রুত বর্ধনশীল এই জাতের গরুর সঠিক পরিচর্যায় এক দিনেই ওজন বাড়বে সর্বোচ্চ ৮০০ গ্রাম। বাড়ির ছাদে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারবিহীন একইসঙ্গে মাছ ও সবজি উলম্ব একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করার কৌশল আবিষ্কার করে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলেচিত হয়েছেন মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. এম এ সালাম। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বাইম মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. ফজলুল আউয়াল মোল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সরদার। এবং উন্নত দেশগুলো মাত্রাতিরিক্ত কার্বন তথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ করে পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে, সেখানে বাংলাদেশ নিঃসরিত এসব কার্বন গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে বিশ্ব বায়ুমন্ডল রক্ষা করছে। গবেষণা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাতেন। গবেষকদের দাবি বাইম মাছে কৃত্রিম প্রজনন তারাই এ উপমহাদেশ প্রথম করেছেন।

এছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধক গুণসম্পন্ন নতুন ছয় জাতের রঙিন আলু উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশে সাড়া ফেলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ রহিম। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এ সকল গবেষণায় সফলতা অর্জনের মাধ্যমে এ দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রেখে চলেছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত নানাবিধ গবেষণা কার্যক্রম, কৃষক প্রশিক্ষণ, খামারি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট তাদের মেধা, শ্রম ও প্রজ্ঞা দিয়ে নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন ও কৃষিতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ছোঁয়া ঘটিয়েছে বলেই আজ আমাদের সোনার বাংলা সত্যিকারের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা স্বাধীন সার্বভৌম খাদ্যশস্যে পরিপূর্ণ এক স্বনির্ভর বাংলাদেশ।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বর্ণাঢ্য গবেষণা সাফল্য : গবেষণা প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)-এর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে সহস্রাধিক গবেষণা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে এর চলমান প্রকল্পসংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফসল ও পশু-পাখির রোগ দমন পদ্ধতি, ভ্যাকসিন, শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে বাউকুল, বাউ-৬৩, বাউধান-২ নামে উফশী ধান জাত বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফশী সরিষা জাত; ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত; কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত; লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচু জাত; কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিযয়াম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি; সয়েল টেস্টিং কিট; হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, হাঁস-মুরগীর কলেরা রোগের ভ্যাকসিন, ফাউল কলেরা, সালমোনেলা ভাই ভ্যালেট, বিসিআরডিভি, আরডিভি, স্বল্প ব্যয়ে মিডিয়ামে কোরেল্লার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধ কল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, রুই, কাতলা, মৃগেল, বিপন্ন প্রজাতির মাছ মহাশোল, বাঘাইর, গুচিবাইম, বাইম, কুচিয়া ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্স-এর মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন, নিরাপদ শুটকি তৈরির ট্যানেল উদ্বাবন, সবজি সংরক্ষণে বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার স্থাপন, গাভীর ওলান প্রদাহ রোগ নির্ণয়, কীট আবিস্কার, উলম্ব পদ্ধতিতে সবজি চাষ, বাউ ব্রো-কালার, বাউ ব্রো-হোয়াইট নামের ব্রয়লার মুরগীর জাত উদ্ভাবনসহ নানা আবিষ্কার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গ্রাজুয়েটরা।

৬১তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বাকৃবি উপাচার্য বলেন, বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার যে চ্যালেঞ্জ আমরা হাতে নিয়েছিলাম তাতে আমরা জয়লাভ করেছি। বর্তমানে আমরা দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছে বাকৃবির প্রায় ৪৯ হাজার গ্রাজুয়েটদের সমন্বয়ে। তবে বর্তমানে দেশে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা যেমন দেশে ক্ষুধা-মঙ্গার অবসান ঘটিয়েছি তেমনি আমরাই একদিন পারব মানুষের মাঝে নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দিতে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি