1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন

গণপিটুনি, চোখের সামনে মা’কে লাঞ্ছনা; নিতে পারল না রাজিব

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রাজিব মিয়া (২২)। তাকে কখনো অন্ধকারাচ্ছন্ন কুড়ে ঘরের বাঁশে আবার কখনো বা খালের পাড়ে গাছের সাথে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। তিনি গত চার বছর ধরে এভাবেই আছেন। অপরাধ আর কিছুই নয় মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এদিক-সেদিক চলে যাওয়া ছাড়াও প্রতিবেশীদের বিভিন্ন ক্ষতি সাধনের তাকে এভাবে রাখা হয়েছে। দিন মজুর বাবা ও গৃহপরিচারিকা মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। বাবা মারা গেছেন প্রায় ৩ বছর আগে আর মা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত থেকেও ছেলের এ ধরনের অবস্থায় আর নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না। তিনিও সঠিক চিকিৎসার অভাবে গত দুই মাস আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এখন রাজিবের জীবনে নেমে এসেছে আরো অন্ধকার। মায়ের বদলে রাজিবকে দেখভাল করছেন অসহায় হতদরিদ্র খালা। তার স্বামীও অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি। এ অবস্থায় বড়ই বেকায়দায় খালা খাদিজা বেগম।

শিকলে বাঁধা রাজিব উপজেলার নান্দাইল সদর ইউনিয়নের ভাটিসাভার গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। নিজে লেখাপড়া না জানলেও ছেলেকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য সর্বদা ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে ছেলেকে নিয়ে দিনমজুরী করায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে বাজারে কুলির কাজ করে বাবার সাথে আয় দিয়েই সংসার চলছিল।

জানা যায়, এমনি এক অবস্থায় পাঁচ বছর আগে ছেলেকে বিয়ে করানো হয়। এর মধ্যে স্থানীয় বাজারে মোবাইল চুরির এক ঘটনায় সন্দেহবশত রাজিবকে ধরে নিয়ে যায় বাজারের কিছু লোকজন। তখন মোবাইল উদ্ধারের জন্য রাজিবকে বেদম পিটানোর পাশপাশি তার সামনেই মা রাবিয়া আক্তারকে মারধরসহ ব্যাপক লাঞ্ছিত করা হয়। এরপর থেকেই অসুস্থ হয়ে শয্যাসায়ী হয় রাজিব। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে রাজিব হয়ে যায় মানসিক প্রতিবন্ধী। সন্তান সম্ভবা স্ত্রী প্রতিবন্ধী স্বামীকে রেখেই চলে যায়। এ অবস্থায় আরো বেপরোয়া হয়ে যায় রাজিব। উছৃঙ্খল আচরণ শুরু করায় এলাকাবাসীর চাপে পড়ে এক রকম বাধ্য হয়েই ছেলেকে বেঁধে রাখেন বাবা আইয়ুব আলী। এর কয়েক বছর পরেই মারা যান বাবা। কঠিন এক দায়িত্ব পড়ে মা রাবিয়ার ওপর। সারাদিন এপাড়া ওপাড়ায় গিয়ে যা আয় করেন তা দিয়েই চলছিল ছেলেকে নিয়ে জীবন। কিন্তু হঠাৎ তিনিও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী হয়ে পড়েন। সেখান থেকেই তিনি মারা যান।

আজ সোমবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি খালের পাড়ে ময়লা অবর্জনার মধ্যেই একটি গাছের সাথে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে রাজিবকে। কারও সাথে কোনো কথা বলে না। শুধু ফেল ফেল করে চেয়ে থাকে। মায়ের কথা জানতে চাইলে পাশেই কবরস্থান দেখিয়ে বলে, ‘আম্মা, আম্মা হেইনো (ওইখানে)। রাজিবকে এখন দেখাশোনা করেন খালা খাদিজা বেগম।

তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমিই তো হেইলারে (স্বামী) লইয়া মরতাছি। তারেই মাইগ্যা আইন্যা খাওয়াই-অহন তো এরেও (রাজিব) খাওয়ানো লাগে। কিন্তু আর কয়দিন পারবাম। একটা ব্যবস্থা করুইন। প্রতিবেশীরা জানান, সঠিক চিকিৎসা হলেই রাজিব ভালো হয়ে যেতে পারে। এই জন্য দরকার সঠিক চিকিৎসালয়ে স্থানান্তর।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি