1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ন

বস্তার তাঁবুতে বসবাস

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার ছিল আব্দুল লতিফের। সুখের আশায় ৬ বছর আগে স্বপরিবারে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকায়। ঢাকায় এসে রিকসা চালাতেন আব্দুল লতিফ। বড় ছেলে শরীফ কারখানায় কাজ করতেন।

দুই বছর আগে ছেলে শরীফ (১৯) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আব্দুল লতিফ রিকসা চালিয়ে, লোকজনের কাছে চেয়ে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েই গত বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে মারা যান ছেলে। পরে ছেলের লাশ নিজ গ্রামে এনে অন্যের জায়গায় কবর দেন।

ছেলে মারা যাওয়ার পর ঢাকায় ফিরেনি আব্দুল লতিফ। নিজের কোনো ঘর নেই। ঘর করার মত তার চার শতাংশ জমি আছে। তবে, ছেলের চিকিৎসা করিয়ে ঘর করার মত টাকা তার হাতে নেই। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কয়েকটি বস্তা চেয়ে এনে সেলাই করে দুই দিকে দুই বাঁশ মাটিতে পুতে তিন ফুট উচ্চতার তাঁবু বানিয়ে বসবাস করছেন।

নিজের আছে বলতে দুই থেকে তিনটি কাঁথা। তাও আবার বালিশ নেই। তাছাড়া রান্না করার জন্য আছে একটি হাড়ি একটি পাতিল। তীব্র শীতে খেয়ে না খেয়ে পাঁচ মাস যাবত সেই তাঁবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন আব্দুল লতিফ।

আব্দুল লতিফ ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের তেলিহাটী-উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত নবী হোসেনের ছেলে।

অসহায় এই পরিবারের ভাগ্যে জুটেনি সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা। সংসারের তিন বেলা খাবার যোগান দেওয়ার জন্য আব্দুল লতিফ অন্যের রিকসা চালিয়ে কোনোভাবে দিন কাটান।

এ বিষয়ে আব্দুল লতিফের স্ত্রী মুর্শিদা বলেন, আমার ছেলে শরীফ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেড় বছর বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে। টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারিনি। তীব্র শীতে খেয়ে না খেয়ে পাঁচ মাস যাবত তাবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু কোনো চেয়ারম্যান মেম্বার এ পর্যন্ত আমাদের খোঁজ নেয়নি। এই শীতে একটি কম্বলও আমাদের কেউ দেয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের অনেক মানুষকে ঘর দিয়েছেন। আমাকে একটা ঘর দিলে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করতে পারতাম।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান বলেন, খুব কষ্টে আব্দুল লতিফ বস্তার তাঁবুতে বসবাস করছেন। সরকার যদি পরিবারকে একটু দেখত তাহলে এই পরিবারের জন্য অনেক ভালো হত।

আরেক প্রতিবেশী হারুনুর রশিদ বলেন, আমি তাদের প্রথমে হাড়ি পাতিল দিয়েছিলাম রান্না করে খাওয়ার জন্য। দিন মজুরি করে হাড়ি পাতিল কেনার পর আমারগুলো ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। আমরা এলাকাবাসী চাই, সে যেন একটি ঘরে বসবাস করতে পারে। তাকে সরকার যেন একটি ঘর দেয়।

এ বিষয়ে আব্দুল লতিফ বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার আগেই এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এক ছেলে এক মেয়ে আছে। এক ছেলে মারা গেছে ক্যান্সারে। এখন আমি নিঃস্ব। সরকার যদি আমাকে দেখত। তাহলে আরও কিছুদিন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম।

এ বিষয়ে বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, বিষয়টি শুনার পর আমি আব্দুল লতিফের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। তাদের একটি ঘর ও একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি করে দেয়ার ব্যবস্থা করব।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি