1. [email protected] : admin : Najmush Shakeer
  2. [email protected] : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০২:১৭ অপরাহ্ন

বোতলটি দূর থেকে নিশানায় লাগাল কীভাবে, ছেলেটি কি ‘বটল ফ্লিপার’

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

যমুনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উদ্দেশে বোতল ফ্লিপ বা ঘূর্ণায়ন অবস্থায় হাওয়ায় তুলে দেন এক যুবক। বোতলটি ঘুরতে ঘুরতে প্রায় ১৫-২০ ফুট দূরে থাকা উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় গিয়ে লাগে। বিষয়টি অনেকের মনেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—এত দূর থেকে টুসকি দেওয়া বোতলটি কীভাবে গিয়ে উপদেষ্টার মাথায় লাগল।

বিষয়টি কি সম্পূর্ণই কাকতলীয় নাকি এর পেছনে কোনো কৌশল রয়েছে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল—বিশ্বজুড়ে বোতল ফ্লিপার নামে একটি কমিউনিটি আছে, যারা টুসকি মেরে বোতল নির্দিষ্ট দূরত্বে নির্দিষ্ট অবস্থানে ফেলার প্রতিযোগিতা করেন। এর নানা কায়দা-কানুনও রয়েছে। উপদেষ্টা মাহফুজের উদ্দেশে বোতল টুসকি মারা যুবকটি তবে এই কমিউনিটির কোনো সদস্য? অথবা তিনি কি নিজে এই মজার খেলার চর্চা করতেন?

সে যা-ই হোক। এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক তরুণ-তরুণীকেই বোতল ফ্লিপিং করে গতকাল রাতের সেই ঘটনার পুনঃ চিত্রায়ণ করতে দেখা গেছে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বোতল ফ্লিপিংয়ের আদ্যোপান্ত।

মূলত বোতল ফ্লিপিং হলো কিছুটা কৌশল আর কিছুটা পদার্থবিজ্ঞানের মিশেল। অর্ধেক পানিভর্তি একটি বোতলকে নির্দিষ্ট কৌণিক গতিতে ছুড়ে এমনভাবে ফেলে দেওয়া, যাতে বোতলটি নির্দিষ্ট স্থানে উল্টো বা সোজা অবস্থায় স্থির হয়ে পড়ে। আপাতদৃশ্যে মনে হতে পারে এটা সাদামাটা মজা, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে পদার্থবিজ্ঞানের সূক্ষ্ম নিয়ম।

বোতল ফ্লিপিংয়ের আদলে মিল পাওয়া যায় ১৯৭০–৮০ দশকে খেলাধুলার অন্য ‘ট্রিক-শট’ ভিডিওগুলোতে, যেখানে ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেট বা টেবিল টেনিস ব্যাট দিয়ে অবিশ্বাস্য কৌণিক শট দেখানো হতো। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এটির পুনর্জন্ম হয় ও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেট যুগের ২০১০ সালে আমেরিকান টেলিভিশন গেম শো ‘মিনিট ইট টু উইন ইট’ চ্যালেঞ্জ স্টেজে প্রথম এই কৌশল প্রদর্শিত হয়। যেখানে প্রতিযোগীরা অর্ধেক পানিভর্তি প্লাস্টিকের বোতল টুসকি মেরে সঠিকভাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করত। এই ঘটনাই ছিল আধুনিক বোতল ফ্লিপিংয়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তবে সত্যিকার উত্থান ঘটে ২০১৬ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার ‘আরড্রে কেন হাইস্কুলের’ কিশোর মাইক সেনাটোরে বিদ্যালয়ের ‘ট্যালেন্ট শো’তে তার বোতল ফ্লিপিং স্কিলের পারফরম্যান্স। সেখানকার একটি ভিডিও ক্লিপ ইউটিউবে আপলোড হলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং #BottleFlipChallenge নামে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমের প্রতিটি কোণে। আজকের দিনেও তরুণ-প্রজন্মের মধ্যে সেরা এক বিনোদনের ট্রেন্ড এই বোতল ফ্লিপিং।

যেভাবে বোতল ফ্লিপিং কাজ করে

অর্ধেক পানিভর্তি একটি বোতল একটু দ্রুত ঘুরিয়ে বোতলের নিচের অংশকে পেছনের দিকে মোড়ানো হয়। যদি ঠিকভাবে করা যায়, বোতলটি সোজা হয়ে মেঝেতে দাঁড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে, বোতল উল্টোভাবে বা ঢাকনায় ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে; এই উল্টোভাবে দাঁড় করানো বেশ কঠিন। এই কৌশলের সফলতায় বড় ভূমিকা রাখে বোতলের ভেতরে তরলের পরিমাণ—প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানি ভরলে সফলতা বৃদ্ধি পাওয়ার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে।

প্রত্যেকবার বোতল ফ্লিপ হলে সাফল্য-ব্যর্থতার সম্ভাবনা ৫০-৫০। সাফল্য পেলেই মস্তিষ্কে অ্যাড্রেনালিনের সঞ্চালন, আর না পেলে পুনরায় চেষ্টার আগ্রহ জাগে। এটি খেলতে বিশেষ কোনো সরঞ্জামও লাগে না। স্কুল থেকে কলেজ, অফিস থেকে বাড়ি, সবখানেই খেলা যায়। ফলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে খেলাটি।

অনলাইনে ‘সবচেয়ে দূর থেকে বোতল ফ্লিপ’, ‘অন্য বস্তু লক্ষ্য করে বোতল ফ্লিপ’—এই ধরনের ক্যাটাগরি গেম অথবা কমপিটিশনে অংশ নেয় তরুণ-তরুণীরা। গিনেস বুকে নাম লেখানোর বাসনা থেকেও এই চর্চা করেন অনেকে। লম্বালম্বি ঘূর্ণন, একাধিক বোতল সারিতে ফেলা, ঢালুতে ফেলা ইত্যাদি রেকর্ড গড়ার চেষ্টা চলে।

এই খেলার সঙ্গে পদার্থবিদ্যার জটিল দ্রব গতিবিজ্ঞান, প্রজেক্টাইল মোশন, কোণীয় ভরগতিবিজ্ঞান, কেন্দ্রমুখী ফোর্স এবং মহাকর্ষের মতো ধারণার সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডসের একগুচ্ছ শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক একটি ন্যূনতম মডেল তৈরি করেন, যেখানে কোণীয় ভরগতিবিজ্ঞানের সংরক্ষণ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বোতলের ভেতরের ভরের পুনর্ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। এই মডেল অনুযায়ী পানির বোতল ফ্লিপের জন্য সর্বোত্তম ভর রাখার অনুপাত ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে।

এই খেলার বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপও তৈরি হয়েছে। ‘BottleFlip2k16’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে আসার প্রথম মাসেই ৩০ লাখবার ডাউনলোড হয়েছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি