বাংলাদেশ নারী ফুটবল মানেই যেন কলসিন্দুর। ছেলেদের ফুটবল যখন একের পর এক ব্যর্থতায় ধুঁকছে, ঠিক তখনই উত্তাল হয়েছে নারী ফুটবলের। আর সেই দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরের।
গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে কলসিন্দুরসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে উঠে এসেছে একদল কিশোরী। যাদের পায়ের জাদুতে ধুঁকতে থাকা ফুটবলে ফিরেছে আলোর রেখা।
২০১১ সালে বঙ্গমাতা দিয়ে শুরু করে বিশ্ব জয়ের দ্বারপ্রান্তে এই কিশোরী মেয়েরা। দেশের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে অদম্য এই কিশোরীরা। তাদের বদৌলতে সরকারিকরণ হয়েছে কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেয়েদের সংবর্ধনাসহ আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।
এবার অদম্য এই কিশোরীদের গল্প উচ্চ মাধ্যমিক শাখার একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। দ্য আনবিটেন গার্লস (অপরাজিত মেয়েরা) শিরোনামে পাঠ্য বইয়ে একটি বিশেষ পাঠ রাখা হয়েছে। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোরীদের সফলতার গল্প লেখা হয়েছে এই পাঠে।
সানজিদা, মারিয়া, তহুরা, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নাজমা আক্তার, মাজিয়া আক্তারদের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করা সাবিনা খাতুনকে নিয়ে লেখা হয়েছে। এদের মাঝে সানজিদা আক্তার এশিয়া মহাদেশের সপ্তম স্থান অধিকার করা মারিয়া মান্দা অধিনায়ক এবং তহুরা খাতুন আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় তাদের নিয়ে সচিত্র পাঠ রয়েছে। মেয়েদের পাশে থেকে উৎসাহ এবং সহযোগিতা করায় মালা রাণী সরকারের এবং বর্তমান মেয়েদের কোচ জুয়েল মিয়ার নামও রয়েছে।
শনিবার রাতে পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ হওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসে কলসিন্দুরের অদম্য মেয়েরা।
এদিকে রোববার দুপুরে কলসিন্দুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরিদর্শনে আসেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস এবং জেলা প্রশাসক এনামুল হক। কলসিন্দুরের মেয়েদের খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন বিভাগীয় কমিশনার।
তিনি জানান, কলসিন্দুরের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সবসময় পাশে থাকবেন।
এ ব্যাপারে কলসিন্দুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক মালা রাণী সরকার জানান, আমাদের মেয়েদের নাম জাতীয় পাঠ্যবইয়ে আমরা খুবই আনন্দিত গর্বিত।
কোচ জুয়েল মিয়া জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে নারী ফুটবলের সফলতা ধরে রাখার জন্য কলসিন্দুর থেকে আরও নতুন ফুটবলার তৈরি হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন জানান, কলসিন্দুরের মেয়েদের সফলতার ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। তাদের মঙ্গল কামনা করি এবং খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখায় ভালো করুক সেই প্রত্যাশা রইলো।
উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম জানান, কলসিন্দুরের মেয়েদের খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে। একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ না করে যদি প্রাথমিক পাঠ্য করা হতো তাহলে আরও ভালো হতো বলে মনে করেন সচেতন মহল। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ফুটবল খেলবে না বরং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তৈরি হয়েছে আজকের সানজিদা মারিয়ারা।