1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন

জামালপুরে বাড়ি ফিরল সেই ৩ মাদরাসাছাত্রী

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

জামালপুরের ইসলামপুরের আবাসিক একটি কওমি মাদরাসা থেকে নিখোঁজের পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানী ঢাকার মুগদার মান্ডা বস্তি থেকে শিশু তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদেরকে উদ্ধার করতে পারায় বড় ধরনের চাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ। আজ শুক্রবার বিকেলে তার কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মত প্রকাশ করেন।

ভুক্তভোগী তিনজনই মেয়েশিশু এবং জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতাকে মুখ্য বিবেচনায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হলেও উদ্ধার হওয়া তিন শিশুর ভাষ্য অনুযায়ী নিখোঁজের ঘটনার সাথে মাদরাসাটির গ্রেপ্তার চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাচার বা জঙ্গিবাদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দারুত তাকওয়া মহিলা কওমি মাদরাসার তিন ছাত্রী গত রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে তাদের মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয়। তারা ওই মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বয়স নয় বছর থেকে ১১ বছরের মধ্যে। এ ঘটনায় নিখোঁজ শিশুদের একজনের বাবা বাদী হয়ে গত বুধবার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ইসলামপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি মাদরাসাটির মুহতামিম মো. আসাদুজ্জামানসহ চারজন শিক্ষক জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, গত রবিবার ওই মাদরাসার তিনছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পেয়ে ইসলামপুর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধারে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে ইসলামপুর পুলিশ কল্যাণ মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে ওই তিনছাত্রীকে ইসলামপুর রেলস্টেশনের দিতে যেতে দেখা যায়। তারা ট্রেনে ঢাকায় যেতে পারে সন্দেহ হয় পুলিশের। ওই ফুটেজের সূত্র ধরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. সুমন মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বশেষ কমলাপুর রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় ওই তিনছাত্রীকে স্টেশন থেকে বের হতে দেখা যায়।

পরে সেখানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্টেশনের রাজা মিয়া (১৪) নামের এক রিকশাচালক ওই তিনছাত্রী সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দেয়। রাজা মিয়া ওই তিনছাত্রীকে স্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের কাছে জানতে চায় তারা কোথায় যাবে। তখন ওই তিনছাত্রী তাকে জানায়, তাদের বাবা-মা বেঁচে নেই। তারা ঢাকায় কাজ করবে বলে বাড়ি থেকে না বলে পালিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় রাজা মিয়া তাদেরকে রাজধানীর মুগদার মান্ডা বস্তিতে ১৫০০ টাকায় একটি ঘরভাড়া করে দেয়। তিন শিশুর মধ্যে দুজনকে স্থানীয় এক পোশাক কারখানায় কাজও নিয়ে দেয় রাজা মিয়া।

পুলিশ সুপার জানান, রাজা মিয়া তিন শিশুর কোন ক্ষতি করেনি। তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করেছে সে। মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়লেও তিনজনই সুস্থ আছে। রাজা মিয়ার তথ্যমতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মান্ডা বস্তি থেকে ওই তিনছাত্রীকে উদ্ধার করে আজ শুক্রবার সকালে তাদেরকে জামালপুরে নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, ওই তিনছাত্রী শিশু বয়সের হওয়ায় এবং আবাসিক কওমি মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব চাপে ছিলাম। তারা শিশু পাচারকারীর খপ্পরে পড়েছে, নাকি এর সাথে জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতা আছে-এসব বিবেচনায় নিয়েই তদন্তে নামি। শিশু তিনটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার এবং তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদেরকে পাচার বা জঙ্গিবাদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ওই মাদরাসার মুহতামিম মো. আসাদুজ্জামানের স্ত্রীর এক হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে মাদরাসার শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রীরা তাদেরকে সন্দেহ করলে নিজেদের অসহায় মনে করে গত রবিবার ভোর রাতে কৌশলে মাদরাসার জানালা দিয়ে তারা পালিয়েছিল। সাংবাদিক সম্মেলনের পর এই তিন শিশুকে আদালতে হাজির করে ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিশুদের ফিরে পেয়ে তাদের স্বজনদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

তিনছাত্রী নিখোঁজের ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলায় জেলা কারাগারে আটক ওই মাদরাসার মুহতামিম মো. আসাদুজ্জামানসহ চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কি হবে, এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, একটি আবাসিক মাদরাসা থেকে তিনছাত্রী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মাদরাসার শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে নিঃসন্দেহে। তাদের মাদরাসাটি সরকারি অনুমোদনও নেই। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ইতিমধ্যে মাদরাসাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলার ধারা বদল করে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাসহ অন্যান্য আরো অভিযোগে মামলাটি চলমান থাকবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম খান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. সুমন মিয়া, ইসলামপুরের ওসি মো. মাজেদুল ইসলাম, জামালপুর সদর থানার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম খান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাহমুদুল হাসান মোড়ল উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি