ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে ভারতে পালাতে সহযোগিতার করার অভিযোগে গ্রেপ্তার আদিবাসী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে সিবিউন জানান, ফিলিপের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। ফিলিপের সঙ্গে তার কথা হয়। তখন ফিলিপ তাকে জানান, তিনি দুজনকে পার করে দিয়েছেন।
এদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
তবে শুনানিতে আসামিপক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। এ সময় বিচারক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, কিছু বলবেন কি না? প্রথমে সিবিউন বলেন, স্যার। নিউজে দেখি হাদি ভাইকে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামিদের পালাতে ফিলিপ সহযোগিতা করেছেন। তখন তাকে ফোন দিয়ে বললাম আপনার নাম (হাদি হত্যাচেষ্টায়) আসছে।
তখন ফিলিপ স্বীকার করেন তিনি দুইটা লোক সীমান্ত পার করেছেন। তখন বিচারক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ফিলিপ কোথায় আছে, জানেন? জবাবে তিনি বলেন, না, জানি না। ঘটনার বিষয়েও কিছু জানি না।
এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আরেক আসামি সঞ্জয় চিসিম বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। ফিলিপের সাথে আমার কথা হয়।
ঘটনার দিন রাতে ফিলিপ ফোন দিয়ে আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। পরে তিনি ফোন দিয়ে জানান, কাজ হয়ে গেছে; চলে যাও। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বুধবার ময়মনসিংহের হালুরঘাট ও ধুবাউরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ মামলার এ পর্যন্ত নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর আসামিদের মধ্যে রেন্টকার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তার শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু রিমান্ডে রয়েছেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়। হাদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব থেকেই ঢাকা-৮ আসনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পলাতক কেন্দ্রীয় নেতাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৪ এর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনা, নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা, গান পাউডার দিয়ে আগুন সন্ত্রাস, দেশি ও বিদেশি অস্ত্র গোলাবারুদের জোগানদান, অনলাইন গুজব রটনা ও ভীতি প্রদর্শন করছেন। এর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা, জনমনে আতঙ্ক ও ভীতি তৈরি করা সর্বোপরি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ বাধা প্রদান এবং আগ্রহী প্রার্থীদের মনোবলে আঘাত হানার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এজাহারে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে জুমার নামাজ পড়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন হাদি। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে ওইদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে এভারকেয়ার পাঠানো হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।