বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার পর তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন প্রধান উপদেষ্টা।
১১ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো উদ্বেগজনক। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসাসহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল আজ সকালে ঢাকায় এসেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেন। এ সময় কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় হাসপাতালের প্রধান ফটক।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার প্রধান উপদেষ্টাকে ভেতরে নিয়ে যান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের নেতা–কর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। তাঁরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিনস এবং যুক্তরাজ্য, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানান। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর দ্রুত তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকেরা এখনো খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া তাঁর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থায় স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে ওই এলাকায় যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের সেখানে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।