পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তুত। যারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে, তারা সেই পর্যায়ে যেতে পারবে না।
আজ সোমবার রাজধানীর অ্যালায়েন্স ফ্রাঁসেজ দে ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ‘দ্য সোল অব জুট: ক্রাফট, কালচার, ট্যুরিজম অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক পাটপণ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সেন্ট্রাল রোডে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনার বাসায় ককটেল মারবে আর আপনি নিশ্চিন্ত থাকবেন, তা তো হতে পারে না। তবে আতঙ্কিত হওয়া এক জিনিস, আর নিশ্চিন্ত না থাকা আরেক জিনিস। এবং সতর্ক হওয়া আরেক ব্যাপার। কথা হচ্ছে যে, এ রকম একটা শান্ত পরিবেশে যে এ রকম অস্থিতিশীলতা গড়ে তোলা হচ্ছে, এটার ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলতে হবে। আপনারা এগিয়ে আসুন। সরকারের যা করার সরকার তা করবে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যাতে সহিংসতা বৃদ্ধি না পায়, সে জন্য গণমাধ্যম এগিয়ে আসুক। যাতে সহিংসতা বৃদ্ধি না পায় সে বার্তাটা যেন গণমাধ্যম প্রচার করে।’
দেশে নাশকতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশ থেকে কারা ইনফ্লুয়েন্স করেছে, দেশ থেকে কারা ওই বাসটাকে আগুন দেওয়ার জন্য ইনফ্লুয়েন্স করেছে, নামগুলো আপনারা জানেন। তদন্ত করে সরকার যে নামগুলো পাচ্ছে, সে নামগুলোই দিচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। এরপর কারও যদি মনে হয় তার কাছে আরও তথ্য আছে, তাহলে সরকারকে জানান।’
সহিংসতা নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, সহিংসতা, ককটেল মারা এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও আরও একটু দায়িত্বশীল হওয়ার সুযোগ আছে। গণমাধ্যম চাইলে আতঙ্কটা ছড়াতে পারে; আবার যারা এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, তাদের নিন্দা করে সহিংসতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পারে।
পাটপণ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় দেশের পাটকেন্দ্রিক শিল্প, সংস্কৃতি, পর্যটন ও উদ্ভাবনকে আরও বিস্তৃত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য নতুন নতুন পাটপণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি আধুনিক গৃহ ও কর্মস্থলে পাটের নান্দনিক প্রয়োগ বাড়াতে হবে। ডেকোরেটিভ আর্টসেও পাটের সৃজনশীল উপস্থাপন বাড়ানো সময়ের দাবি। পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করা এবং পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, পাটচাষিদের প্রণোদনা দিতে হবে এবং পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে পরিবেশ ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।
রিজওয়ানা বলেন, সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত দেশের শপিংমলে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পাটের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে, অথচ দেশে এখনো পাটের ব্যাগের প্রচলন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। পলিথিন বর্জন করে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভোক্তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সরকার জুট ডাইভার্সিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। তিনি বলেন, পাটপণ্য পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক; পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে উদ্যোক্তাদের পাটপণ্য প্রসারে আরও উদ্যমী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
এসময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বিলকিস জাহান রিমি, জুট ডাইভার্সিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. জাহিদ হোসেন, অ্যালায়েন্স ফ্রাঁসেজ দে ঢাকার পরিচালক ফ্রাঁসোয়া শমব্রো এবং বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদুল করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে অতিথিরা পাটপণ্য প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
প্রসঙ্গত, অ্যালায়েন্স ফ্রাঁসেজ দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রদর্শনী ১৭–১৯ নভেম্বর প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।