1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

ইসলামী ব্যাংকের ২০০ কর্মী ছাঁটাই, ৪৯৭১ জন ওএসডি

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন এক শুদ্ধি অভিযান। চাকরিবিধি ভঙ্গ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মীকে ওএসডি (অন সার্ভিস ডিউটি) করা হয়েছে। ওএসডি হওয়া কর্মীরা বেতন-ভাতা ঠিকই পাবেন, কিন্তু কোনো দায়িত্ব বা কর্মস্থলে থাকবে না। এ কারণে ব্যাংকটির ভেতরে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন থেকেই হাজারো কর্মীকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি সিভি নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের বেশিরভাগ হয়েছিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে। ফলে বর্তমানে ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক কর্মীই ওই অঞ্চলের মানুষ।

ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, এস আলমের আমলে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকটিকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা ব্যাংকের স্বার্থেই সবাইকে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার আওতায় এনেছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশনায় গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বলা হলেও মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত হন। তারা নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি, সেই ৪ হাজার ৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়েছে। আর যারা পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, তাদের মধ্যে ২০০ জনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তবে, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের দাবি, এক মাস আগে তাদের রিট আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। ব্যাংক সেই আদেশ অমান্য করে নতুন পরীক্ষা নিয়েছে, যা বেআইনি। এ কারণে তারা আবার আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য ভাইভা নেওয়া হয়, কিন্তু কর্মীদের মান যাচাই পরীক্ষার বিষয়টি নতুন অভিজ্ঞতা।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই কর্মী নিয়োগ বা যোগ্যতা যাচাই সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ারভুক্ত, তবে আইন ও নীতিমালার মধ্যে থেকেই তা করতে হবে।

জানা যায়, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নানা কৌশলে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। এতে ব্যাংকটি গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই অযোগ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বাছাই করতে এবং ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করছে আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর। যদি বিশেষ পরীক্ষা ও ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলমান থাকে, তবে হাজার হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। আর আদালত যদি কর্মীদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়, তবে ব্যাংককে নতুন করে সমাধান খুঁজতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ প্রক্রিয়া ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন এক নজির, যেখানে কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সরাসরি পরীক্ষা নিয়ে চাকরি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি