1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ইন্দোনেশিয়া-শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৮০০ ছুঁইছুঁই লন্ডন-দিল্লি আর পিন্ডিতে বসে কোনো রাজনীতি চলবে না: সাদিক কায়েম শেখ হাসিনা দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেননি : সালাহউদ্দিন ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে জয়শঙ্কর বললেন, সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ঘোষণা মাগুরায় সাব-রেজিস্ট্রি ও ভূমি অফিসে পেট্রোল বোমা, অগ্নিকাণ্ড ভারতকে বাদে বাংলাদেশ-চীনসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে আলাদা জোট করতে চায় পাকিস্তান পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি স্বৈরাচার পতন দিবস আজ নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির নিজস্ব ইচ্ছা: প্রেস সচিব

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আখের রস থেকে হাতে তৈরি লাল চিনির ঐতিহ্য প্রায় আড়াইশ বছরের। মিহি দানার পাউডার জাতীয় এ চিনি শরবত, পিঠা বা মিষ্টান্ন সব কিছুতেই ব্যবহার করেন স্থানীয়রা। এই চিনি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং শতভাগ বিশুদ্ধ।

কোনো ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া অর্গানিকভাবে তৈরি করা এ চিনির কদরও বেশ। এ উপজেলায় উৎপাদিত চিনি প্রতিবছর প্রায় শতকোটি টাকায় বিক্রি হয় বলে জানায় কৃষি বিভাগ। ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, ওয়েবসাইট চেক করে আজ আমরা জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ২০২৪ সালের ১১ জুলাই ফুলবাড়িয়ার লাল চিনির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে।

তিনি আরও বলেন, আবেদন নম্বর ছিল জিআই-৮৮। গত ২৭ মে শিল্পমন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর থেকে জার্নালে প্রকাশ করা হয়। আর কোনো পক্ষের দাবি আছে কী না সে জন্য জার্নালটি প্রকাশ করা হলেও কারও দাবি না থাকায় সব প্রক্রিয়া শেষে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। সনদের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয়েছে৷

নূর মোহাম্মদ বলেন, জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। আগে যারা লাল চিনি সম্পর্কে জানতো না তারাও এখন জানতে পারবে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় কৃৃষকরাও এটির উৎপাদন বাড়াবে এবং সরকারেরও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়বে। অর্গানিক পণ্য হিসেবে দেশের বাইরে রপ্তানি করা গেলে চাষিদের জন্য অন্যরকম সুযোগ তৈরি হবে।

কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষক-কৃষানি আখ উৎপাদন ও চিনি তৈরির কাজ করেন।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাল চিনি তৈরির একমাত্র কাঁচামাল হলো আখ। আখের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে লাল চিনি তৈরি করা হয়। আখ মাড়াইয়ের আগে চাষিরা লাল চিনি তৈরির জন্য জ্বালঘর তৈরি করেন। লাল চিনি তৈরির জন্য প্রথমে আখ জমি থেকে সংগ্রহ করে তা পরিষ্কার করে যন্ত্রচালিত আখ মাড়াই কলের সাহায্যে আখ থেকে রস বের করা হয়।

জ্বালঘরের চুলায় অনেকগুলো লোহার কড়াই বসানো হয়। তারপর প্রথম কড়াইয়ে পরিমাণমতো কাঁচা রস দিয়ে জ্বাল দেওয়া শুরু করা হয়। জ্বাল দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর এক কড়াই থেকে আরেক কড়াইয়ে, তারপর এভাবে সবশেষ জ্বাল দেওয়া রস ঘন হলে চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের তৈরি মুগুর দিয়ে বারবার ঘর্ষণ করে অ-দানাদার বাদামি রঙের লাল চিনি তৈরি করা হয়।

যতক্ষণ না পাকা রস শুকনো ধুলার মতো আকার ধারণ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুঁটতে থাকে। আখের গুণগত মান খারাপ হলে ধুলার মতো না হয়ে গুটি গুটি আকার ধারণ করে। ধুলার মতো বা গুটির মতো যা-ই হোক, ফুলবাড়িয়ার ভাষায় এটিই হলো ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি। দেখতে ধূসর বাদামি বা হালকা খয়েরি হলেও সাদা চিনির বিপরীতেই হয়তো ‘লাল চিনি’ নামকরণ করা হয় একে। চিনি হওয়ার পর তা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। জমিতে আখ চৈত্র মাসে লাগানো হয়। আখ মাড়াই শুরু হয় পৌষ মাসের শুরু থেকে। দীর্ঘ এক বছরে একটি ফসল হয়। আড়াই মাস সময়ের মধ্যে এই চিনি তৈরি হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ২০২৫ সালে ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ জমিতে দেশি জাতের আখের আবাদ হয়। বাকি জমিতে ঈশ্বরদী-৪১ ও ঈশ্বরদী-৪২ জাতের আখ হয়। এক হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৮ মেট্রিক টন লাল চিনি উৎপাদন হয়। লাল চিনি গড়ে ৮ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। এ বছর প্রায় ১০৮ কোটি টাকা লাল চিনি বিক্রি করে আয় করে কৃষকরা। এক মেট্রিক টন আখ থেকে প্রায় ৩২ হাজার লিটার রস হয়। চার কেজি রস থেকে এক কেজি লাল চিনি বের হয়।

বিভাগটি আরও জানায়, লাল চিনিটি সম্পূর্ণ ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে তৈরি হয়। চুলা পরিবর্তনের মাধ্যমে রসগুলো জাল করে, অনবরত হাতের মাধ্যমে ঘূর্ণায়মান করে চিনি উৎপাদন করা হয়। এটি সম্পূর্ণ অর্গানিক বলা যায়। যার কারণে, এটি শরবত বা মিষ্টান্ন হিসেবে যখন পান করা হয় তখন কাঁচা রসের ফ্লেভার পাওয়া যায়। ফলে দেশে ও বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। এ চিনিকে যারা চেনেন তারা অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশে নিচ্ছেন।

রাধাকানাই ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের তারা মিয়া বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে লাল চিনি বানাই। কোনো ধরনের মেডিসিন দিই না। জমিগুলোতে আখ ছাড়া অন্য কিছু না হওয়ায় আখ করতে হয়। চিনিগুলো বাড়ি থেকেই ব্যবসায়ী কিনে নেন। আমাদের হাতে তৈরি লাল চিনি জিআই স্বীকৃতির খবরে খুশি আমি।

স্থানীয় চিনি ব্যবসায়ী মো. আবদুল মজিদ বলেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় চিনির চাহিদা আরও বাড়বে। তাদের ব্যবসার আরও বিস্তৃতি ঘটবে বলে আশা করছি।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, লাল চিনির জিআই স্বীকৃতির বিষয়টি আজ আমরা নিশ্চিত হয়ে সনদের জন্য টাকা জমা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি৷ এ স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত এ অঞ্চলের মানুষ৷ এ স্বীকৃতি এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

 

সূত্র: কালবেলা

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি