ঈদের সময় যাত্রীর গন্তব্য থাকে একমুখী। ফলে ফিরতি ট্রিপে মালিকদের বাস চালাতে লোকসান হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে ঈদে বাসযাত্রায় যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেছেন বাস মালিকরা। এমন দাবিতে বাস যাত্রী, যাত্রী কল্যাণ সমিতি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অবাক হয়েছেন।
সোমবার (১২ মে) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ঈদ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অংশীজন সভায় এ দাবি জানান বাস মালিকরা।
এ বিষয়ে সাধারণ যাত্রী মো. রিপন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের এমনি ঈদের সময় বাস মালিকরা জিম্মি করে। এই ২০০ টাকা যদি আরও বাড়ায় তবে সেটি জুলুম হয়ে যাবে। এটা আমাদের প্রতি অন্যায় হবে। দিন দিন আমরা সবকিছুতেই হেনস্তা হচ্ছি। এটা কেন হবে?’
এ বিষয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা লিংকন মো. লুৎফরজামান সরকার বলেন, ‘প্রতি ঈদে সরকারের কাছে এ রকম ২০০ টাকা, কিছু টাকা ভাড়া বাড়ানোর দাবি করা হয়। তারপর যে যার মতো ভাড়া নির্ধারণ করেন। এরপর সরকারের আর কোনো তদারকি থাকে না। ফলে যাত্রীদের বাড়তি খরচ গুণতে হয়। এ ছাড়া এসি বাসের ভাড়া নিয়েও সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কারণ এখানে কোনো নির্দেশনা না থাকায় যে যার মতো করে ভাড়া আদায় করেন। মোটকথা সড়কে শৃঙ্খলা আনার জন্য সরকারের তদারকির বিকল্প নেই।’
অংশীজন সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার বিষয়ে প্রতিটি টার্মিনালে মালিক, শ্রমিক সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো— ঈদে একমুখী যাত্রী হয়ে যায়। আমাদের হিসাব হচ্ছে বাসে যদি ৭৫ শতাংশ যাত্রী হয়, সেক্ষেত্রে ১০ শতাংশ লাভ হয়। কিন্তু ফেরার পথে ২৫ শতাংশ যাত্রী হলেও তাতে লস হয়। এ কারণে সব নির্দেশনা দেওয়ার পরও ওই সময়ে এই কাজ (অতিরিক্ত ভাড়া আদায়) করা হয়ে থাকে। যেমন- একমুখী যাত্রার বিষয়ে বিমান বেশি ভাড়া নিয়ে খরচ পুষিয়ে থাকে। আমরা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব দিয়েছি ঈদের বিশেষ দিনগুলোতে যদি বাড়তি ভাড়া ধরে দেওয়া যায় তাহলে এটি রোধ করা সম্ভব হবে।’
এমন সময় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সড়ক উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে জানানো হয়, ‘গত ঈদুল ফিতরে পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি কোন পরিবহন, কত টাকা ভাড়া নিয়েছে। আমাদের কাছে সেগুলোর লিস্ট আছে। আপনি চাইলে সেগুলো সরবরাহ করতে পারব। আমরা দেখেছি, নন-এসি বাসের ক্ষেত্রে ১০-৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে পরিবহনগুলো। ভাড়ার চার্টের সঙ্গে আমরা তুলনা করেছি। কিন্তু এসি বাসের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকায় এটার কোন বাধ ছিলো ন। আমরা দেখেছি এসি বাসে ৫০-১০০ শতাংশ ভাড়া তারা বেশি নিয়েছে।’
পরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি এম এ বাতেন বলেন, ‘আমরা চেয়েছি ঈদের আগে ৭ দিন ও ঈদের পরে ৭ দিন যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা। স্থায়ী ভাড়া বৃদ্ধির কোনো বিষয় এখানে রাখি নাই। কোনো বাস যদি ঢাকা থেকে যাত্রী বোঝাই করে খুলনা নিয়ে যায়, তবে আসার সময় একজন যাত্রীকেও আনতে পারে না। সেক্ষেত্রে যদি আমাদের এমন লস দিতে হয়, তাহলে একটি বাস ঈদের আগে যাবে এবং ঈদের পরে ছাড়া আসতে পারবে না। যদি এটি কনসিডার করা না হয়।’
এমন সময় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ অনেক রুটে ঈদের সময়ও উভয়মুখী যাত্রী হয়। এ বিষয়ে একটি সমীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।’
পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ভাড়ার বিষয়টি আমরা ঈদের পরে দেখব।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, সেতু সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম প্রমুখ।